আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না কেন?

বাণিজ্যিক আগ্রাসনে রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলো বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউক, তাদের নাকের ডগায় এই অবাঞ্ছিত রূপান্তর ঘটছে জোরেশোরে।

রাজউক কর্তারা এ ক্ষেত্রে কুম্ভকর্ণের ঘুমে রত। তাদের নীরব ভূমিকায় গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, উত্তরার মতো আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে।

রাজধানীর যেসব এলাকা বাণিজ্যিক বলে পরিচিত, তার সঙ্গে রাজউকের কথিত আবাসিক এলাকার কোনো পার্থক্যই নেই। এসব দেখভাল করার জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাখা হয়েছে, তাদের আনুগত্য আইন ভঙ্গকারীদের দিকে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপার্জনকে তারা এতই গুরুত্ব দেন যে, নিজেদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অনায়াসেই ভুলে যান।

নগরবিদদের মতে, রাজধানীর আবাসিক এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত করার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ধানমণ্ডি থেকে। দেড় দশক আগে ধানমণ্ডিতে চারতলার ওপরে কোনো ভবন ছিল না। এখন ইচ্ছামতো উচ্চতায় দালানকোঠা তৈরি হচ্ছে। ভাড়া দেয়া হচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে।

এখন গুলশান-বনানী-বারিধারায়ও এ ভাইরাস সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করেছে। গুলশান-বনানী এলাকায় বাণিজ্যিক প্রয়োজনের জন্য আলাদাভাবে নকশা করা থাকলেও রাজউক পুরো বিষয়টি গোপন করে গুলশানের একটি সড়ককে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ধীরে ধীরে ঘিঞ্জিতে পরিণত হতে চলেছে পরিকল্পিত নকশায় গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকা গুলশান-বনানী।

একে একে আবাসিক এলাকাগুলো তার চরিত্র হারিয়ে ফেলছে। যেখানে-সেখানে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও অফিস স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে লালমাটিয়া, উত্তরাসহ অন্যান্য আবাসিক এলাকায়।

এসব এলাকার শত শত বাসাবাড়িতে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কয়েকটি ব্র্যান্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আছে ডিপার্টমেন্ট স্টোর, বিলাসবহুল পণ্যের দোকান। আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক রূপান্তর সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের জীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। কোনো সভ্য সমাজে এ ধরনের নৈরাজ্য অকল্পনীয়।

এ অবস্থায় কিছুদিন আগে ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা ও বারিধারা আবাসিক এলাকার সব অবৈধ ও বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের যে উদ্যোগ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

তবে কাজটা খুব সহজ হবে না। এজন্য দৃঢ়সংকল্পের পাশাপাশি কার্যকর তৎপরতা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। প্রথমেই প্রয়োজন উচ্ছেদ অভিযান সুসম্পন্ন করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কী প্রক্রিয়ায় সে পরিকল্পনা কতটা সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে, তার সুস্পষ্ট রূপরেখা। আবাসিক এলাকাগুলোতে বাণিজ্যিক ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা যেমন রাতারাতি গড়ে ওঠেনি, তেমনি এগুলো রাতারাতি উচ্ছেদ করাও সম্ভব হবে না।

বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে আইনি প্রক্রিয়ার দিকে- কোনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে তার মালিক আদালতে মামলা করলে এবং আদালত স্থগিতাদেশ দিলে যে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হতে পারে, তা কীভাবে কাটানো হবে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যারা বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়েছেন, তারা উচ্ছেদ এড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। এ রকম মামলার সংখ্যা অনেক হবে, যা সহজেই বোধগম্য।

তবু সব জটিলতা দূর করে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি প্রশাসন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও রাজউককে সঙ্গে নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সুসমন্বিতভাবে এই জনমুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নে তৎপর হোক।

ইফতেখার আহমেদ টিপু : একটি শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যান

chairman@ifadgroup.com

শেয়ার করুন: