ভূয়া ছবি দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যাচারের জন্য শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইলো মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, ছবি দুটি তারা ‘ভুল করে’ প্রকাশ করেছে। এই ভুলের জন্য পাঠক ও ওই ছবি দুটির আলোকচিত্রীদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। এর আগে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রকাশিত বইয়ে ভুয়া তথ্য ও ছবি ব্যবহারের বিষয়টি ধরা পড়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানে।
রয়টার্স জানায়, ওই বইয়ে থাকা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও তথ্য ভুয়া। এতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানের বর্বরতার ছবিকে রাখাইনে রোহিঙ্গা কর্তৃক বৌদ্ধ নিধনের ছবি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
শুক্রবার এ নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদনে রয়টার্স বলে, গত জুলাইয়ে ‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও সেনাবাহিনী: পর্ব ১’ (মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য টাটমাডো: পার্ট ১) শিরোনামে ১১৭ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিভাগ।
ওই বইয়ে ১৯৪০ এর দশকে মিয়ানমারের দাঙ্গার অধ্যায়ে একটি ছবির বিবরণে বর্মী ভাষায় রোহিঙ্গাদের হাতে বৌদ্ধ হত্যার ছবি হিসেবে বোঝানো হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে ছবিটি আসলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বর্ববতার বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
বইটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সহিংসতার জন্য বাঙালিদের দোষারোপ করা হয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বইটিতে আরও দুটি ভুয়া ছবি পাওয়া গেছে যেগুলো রাখাইন অঞ্চলের আর্কাইভ ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই তিনটি ছবির মধ্যে দুটি তোলা হয়েছে বাংলাদেশ ও তানজানিয়ায়।
মিয়ানমারের রাখাইন ছেড়ে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের একটি ছবির ক্যাপশনে মিথ্যাচার করে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গতবছর অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও গত দশ মাসে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এর দায়ও বাংলাদেশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আমরা সবসময় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমার কখনও আপত্তি করে না। বলে নিয়ে যাবে। … বাস্তবতা হল- তারা বলে, কিন্তু করে না।”