হিরো আলম

হিরো আলম কি দেশীয় চলচ্চিত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন না?

মজা করা সবাই পছন্দ করেন, এতে আনন্দ পাওয়া যায়। শরীর ও মন ফুরফুরে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো নয়, সেটা মজা হোক বা অন্য কিছু। মজা করতে করতে ভিডিও গানের শুটিং করা, সেই গানে মেয়েদের নিয়ে নাচানাচি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছিলেন বগুড়ার ছেলে হিরো আলম।

সবাই লাইক, শেয়ার দিয়ে তাকে সেলিব্রেটি বানিয়ে দিয়েছেন। এরপর তার খেলা শুরু, শুদ্ধভাবে কথা বলতে না পারা হিরো আলমের ইন্টারভিউ নেওয়া শুরু করে দেয় টিভি, রেডিও এবং ইউটিউব চ্যানেলগুলো। আসলে এসবের পিছনে তাদের স্বার্থটাই মুখ্য। কয়েকদিন আগে ভারতীয় মিডিয়া হিরো আলম নিয়ে খুব ঝড় তুলেছে। এর বছর দুয়েক আগে গুগলে সালমান খানের চেয়ে হিরো আলমকে বেশি খোঁজা হয়েছে বলে খবরে এসেছিল।

সালমানের ৩০ বছরের পরিশ্রম করে এক নম্বর তারকা হওয়া সবই বৃথা গেলো হিরো আলমের কাছে! খুবই মজাদার তথ্য। গতকালের কয়েকটি অনলাইনের খবর হলো- রাজনীতিতে আসছেন হিরো আলম! বেশ কিছুদিন আগে এক প্রোগ্রামে কথা হয় এক ভারতীয় ব্যবসায়ীর সাথে। বসুন্ধরা কনভেনশন হলে প্রতিবছর মেলার আয়োজন করেন তিনি। হিরো আলম বিষয়ে তার মন্তব্য, হিরো আলমকে এখনই না আটকালে বিশ্বমিডিয়া বাংলা চলচ্চিত্রকে ভুল বুঝবে।

এমনিতেই বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক বদনাম আছে। এর সাথে এই দুইটা টাকার জন্য এই ধরনের সস্তা বিনোদনে যদি মেতে উঠি, তাহলে তো আমরা বিশ্ব মিডিয়ার বাজারে মাথা উঁচু করতে পারবো না। কত নামী-দামী পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অনেক শ্রম দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ববাজারে ভাল মানের সিনেমা-নাটক, শর্ট-ফ্লিম উপহার দিচ্ছে পুরস্কার পাচ্ছে।

আমরা যদি হিরো আলমের মতো সস্তা মার্কা স্টারদের নিয়ে মাতামাতি করি, তাহলে তাদের পরিশ্রমটা বৃথা যাবে, বাংলা চলচ্চিত্র আর কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। অনেকেই বলে থাকেন, হিরো আলমরা ঝড়ের মতো আসে, আর কুয়াশার মতো বিলীন হয়ে যায়। এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আর কেউ কাউকে জোর করে আটকানোর দরকার নেই। যে ভালো করেছে সে টিকে রয়েছে। আর যে যুগের প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া দিতে পারছে না সে অকালে ঝরে গেছে।

তবে এটাও ঠিক যে, কলকাতা বা মুম্বাইয়ের মানুষ হিরো আলমকে সাধে দেখে না, কারণ তারা শাহরুখ, সালমান কিংবা আমির খানের ক্যারিশমা দেখতে দেখতে বিরক্ত। তাই তারা আলাদা স্বাদ নেওয়ার জন্য হিরো আলমকে বেছে নিয়েছে।

এদিক দিয়ে হিরো আলম সবার থেকে আলাদা। এবার আসি বাংলাদেশের কথায়। ঢাকাই ফিল্মে ‘চৌধুরী সাব কিংবা আমরা গরিব হলেও মানুষ অথবা, আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি তাই বলে এই নয় যে আমি আপনার টাকাকে ভালোবাসি’ এই ধরণের একই সংলাপ ঘুরে ফিরে মানুষ যখন বিতৃষ্ণা জেগেছে, তখন দর্শক সস্তায় আলাদা স্বাদ নিতে হিরো আলমকে বেছে নিয়েছে। এটাও হিরো আলমের বিশেষ একটা দিক।

হিরো আলমের যারা ভক্ত আছেন, তারা অধিকাংশ নিম্নবিত্তের। আর যদি কোন উচ্চমার্গীয় দর্শক হিরো আলমকে দেখে থাকে, সেটা হিরো আলমের দোষ নয়, দোষ আমাদের মধ্যে যারা সাংস্কৃতিক জগতের ধারক ও বাহক তাদের। কারণ তারা যুগোপযোগী বিনোদন মানুষকে দিতে ব্যর্থ। আর এই সুযোগে হিরো আলমদের উত্থান ঘটে।

তবে আসল কথাটা হচ্ছে, দেশিয় চলচ্চিত্রের ভাবমুর্তি নিয়ে। মার্কেটিংয়ের ভাষায় একটা কথা আছে, পজিটিভ মার্কেটিংয়ের চেয়ে নেগেটিভ মার্কেটিংটা ছড়ায় বেশি। আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে বিশ্বের মানুষের এমনিতেই নেগেটিভ ধারণা আছে। তার মধ্য যদি এই ধরনের কিছু বিশ্ববাসীর কাছে যায়, তাহলে তো তারা আমাদের ভুলভাবে চিনবে।

আর কোন জিনিষের একবার যদি নেগেটিভ ধারণা তৈরি হয়ে যায়, তাহলে পরবর্তীতে সেই জিনিসটা আমরা কিনি না বা দেখি না । এই সুন্দর দেশটাকে আরও বেশি সুন্দর করার জন্য এই দেশের তরুণরা কাজ করছেমন রাত-দিন। হিরো-আলমের সস্তা ভিডিও দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট হবে, এটা কারো কাম্য নয়।

বি:দ্র: প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বিডিভিউ২৪ ডটকমের সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বিডিভিউ২৪ ডটকম কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

শেয়ার করুন: