১০ জনের প্রাণ বাঁচিয়ে ‘বীর শিশু’ উপাধি পেলো এই শিশু!

উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা আর সাহসিকতার অনন্য নজির স্থাপন করে ডুবন্ত ১০ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্র। আর এই মানবিক ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্যে তাকে ‘বীর শিশু’ উপাধি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন জেলা প্রশাসক। চলনবিলে নৌকাডুবির ঘটনায় এমন তাক লাগানো ঘটনাই ঘটেছে পাবনায়।

গত শুক্রবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় পাবনার চলনবিলের পাইকপাড়ায় ২২ যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে ১০ জনই বেঁচে গেছেন শিশু সুমনের উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা আর সাহসিকতার জন্য।

জেলার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পাইকপাড়া গ্রামের হতদ্ররিদ্র কৃষক আব্দুস সামাদ ও সুফিয়া খাতুনের ছেলে সুমন হোসেন লেখাপড়া করে চলনবিল অধ্যুষিত হান্ডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে।

ঘটনার সময় বিলের মধ্যে ছোট একটি ডিঙ্গী নৌকা নিয়ে প্রতিবেশী এক চাচাকে পার করে বাড়ি ফিরছিল। এমন সময় তার পাশেই ২২ জন যাত্রী বোঝাই একটি একটি নৌকা ডুবে যায়।

ডুবে যাওয়া যাত্রীদের আর্তচিৎকার শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এগিয়ে সবাইকে নৌকা ধরতে বলে। এসময় তাদের ডিঙ্গীতে না তুলে শুধু নৌকা ধরা অবস্থায় বিলের পাড়ে নিয়ে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীদেরকেও উদ্ধার কাজে সহায়তা করে সে।

এ বিষয়ে শিশু সুমন জানায়, ঘটনার সময় ওই নৌকাটির ছইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রীরা সবাই সেলফি তুলতে গেলে ছই ভেঙে যায়। এ সময় সবাই তাড়াহুড়ো করে ছই থেকে নামতে গেলে নৌকাটি কাৎ হয়ে ডুবে যায়।

এ সময় ওই নৌকার যাত্রীরা আমাকে বাঁচাতে বলে। তখন আমি সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি। আমার ছোট নৌকাটি ধরে ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পারায় আমি খুশি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হান্ডিয়াল এলাকার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় চলনবিলের পাইকপাড়ায় নৌকা ডুবির ঘটনায় শত শত মানুষ ভিড় করে।

এ সময় সবাইকে হতবাক করে দিয়ে সে একাই একটি ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে উদ্ধার তৎপরতায় ঝাঁপিয়ে পরে। তার সহায়তায় একে এক উদ্ধার হয় ১০ জন নৌকা যাত্রী। শিশু সুমনের এমন সাহসিকতা বড়দের জন্যে সত্যিই একটি বড় দৃষ্টান্ত।’

সুমনের বাবা কৃষক আব্দুস সামাদ ছেলের এমন সাহসিকতার ঘটনায় খুশি। তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা গরিব, তবে ছেলের এমন কাজ দেখে সব দুঃখ-কষ্টের কথা ভুলে গেছি। আমার ছেলে ডিসি স্যারের হাতে এমন কাজের জন্যে পুরষ্কার পাওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।’

হান্ডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মানবতার সেবায় যে ভূমিকা রেখেছে তাতে আমি গর্ববোধ করি। তার এই কাজের মুল্যায়ন করা খুবই কঠিন।’

এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সুমন স্বেচ্ছাশ্রমে একজন বীর। সে একাই দশজনকে উদ্ধারে সাহসী ভূমিকা রেখেছে।

তার শিক্ষার সহায়তায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। শিশু সুমনসহ তার পরিবারকে ধন্যবাদ জানান জেলা প্রশাসক।

শেয়ার করুন: