বাবা মায়ের অমতে বিয়ে করায় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় হবিগঞ্জের তরুণ মো. রোমানকে। এরপর ঢাকায় থাকা বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় তেজগাঁওয়ের পূর্ব নাখাল পাড়ার একটি ভাড়া বাসায় ওঠে নবদম্পতি রোমান ও মীম আক্তার রিয়া। কিন্তু তাদের অর্থকষ্ট চলছিল।
এ পর্যায়ে রোমান নতুন বউয়ের খরচ চালাতে প্রতিবেশীর শিশুকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল। তবে পুলিশি তৎপরতায় তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। স্ত্রীসহ রোমান ও তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ২৮ আগস্ট রাত ৮ টার দিকে তেজাগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পূর্ব নাখালপাড়ার ৩৪১/১ বাসার ভাড়াটিয়া মো. সাইফুল ইসলাম ও সাথী আক্তার দম্পতির চার বছরের শিশু সন্তান তোয়াছিন ইসলাম সিমন অপহৃত হয়।
এ সময় শিশুটির মা রান্নাঘরে এবং বাবা বাসার বাইরে ছিলেন। ঘুমন্ত শিশুটিকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে যায়। বাবা মা তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তারা ওই রাতেই বিষয়টি পুলিশ ও স্বজনদের জানান। শিশুটির বাবা সাইফুল ইসলাম রাতেই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
শিশুটিকে খুঁজতে তার বাবা সাইফুল ২৮ আগস্ট রাতে এবং পরদিন (২৯ আগস্ট) সকালে পূর্ব নাখালপাড়ায় মাইকিং করেন। এসময় অপহরণকারী রোমানও তার সঙ্গে ছিল। শিশুটিকে খুঁজে পেতে রোমান ও তার স্ত্রী প্রথম থেকেই সহযোগিতা করে আসছিল। এ কারণে রোমান ও তার স্ত্রী সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিল।
শিশু সিমনকে উদ্ধার করে রোমানকে গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) বিকালে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
উপকমিশনার জানান, স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মিলে অপহরণের নাটক সাজায়। তারা মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। পরে সিমনের বাবা সাইফুল ইসলাম ১০ লাখ টাকায় ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য রাজি হন। পরে পুলিশ জানতে পেরে রোমান ও তার স্ত্রীসহ অপহরণ চক্রের ছয় জনকে গ্রেফতার করে এবং শিশু সিমনকে উদ্ধার করে।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ২৮ আগস্ট রাতে বাসার সামনে খেলার সময় সিমনকে তুলে নিয়ে যায় প্রতিবেশী রোমান। ওই রাতেই তার বাবা সাইফুল ইসলাম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এরপর রোমান নিজেই এলাকায় মাইকিং করে এবং একইসঙ্গে সিমনের বাবার সঙ্গেও মোবাইলে মুক্তিপণের দাবি জানিয়ে যেতে থাকে। এর জন্য মোবাইলে ভয়েস টুলস নামে একটি অ্যাপ ব্যবহার করে সে। ১০ লাখ টাকায় সিমনকে ফেরত দেওয়ার জন্য সিমনের বাবার সঙ্গে তার চুক্তি হয়।
পরে সিমনের বাবা বিষয়টি পুলিশকে জানালে গতকাল বুধবার (২৯ আগস্ট) মধ্যরাতে পুলিশ তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের ছয় জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় সিমনকে একটি খোলা মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়।
তেজগাঁও পুলিশের উপকমিশনার বলেন, অপহরণকারীদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর। এর আগে তারা এরকম কোনো ঘটনা ঘটিয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তারা টাকার জন্যই সিমনকে কৌশলে অপহরণ করেছিল। যে মোবাইল থেকে কল করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে, সেই মোবাইলটি একসময় রোমান ব্যবহার করত।
ছেলেকে পেয়ে বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আমার বাবুকে উদ্ধার করেছে। আমার আর কিছু চাওয়ার নাই। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। আমার বুকের ধনকে ফিরিয়ে দিছে পুলিশ