ঢাকার সাভার উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হাজি মো. সেলিম মন্ডলকে তার বৌ পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। আজ সোমবার দুপুরে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান বিকেলে সংবাদমাধ্যমকে জানান, সেলিম মন্ডলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের জন্য আজ তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ৩ আগস্ট সেলিম মন্ডল তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার বকুলকে (২৫) অ্যাসিডে ঝলসে দিয়ে হত্যা করে। পরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানা পুলিশ সেদিনেই তাঁর লাশ উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের স্বরূপপুর গ্রাম থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। এর আগে সাভারের বিরুলিয়ার একটি অনুষ্ঠানে সেলিম মন্ডল তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেন। এরপর থেকে তাঁর স্ত্রী নিখোঁজ ছিলেন। পরে ওই গৃহবধূর লাশ শনাক্ত করেন নিহতের ভাই উজ্জ্বল হোসেন।
এ নিয়ে গতকাল সিংগাইর থানায় একটি অভিযোগ দিলে সিংগাইর থানা পুলিশ বিরুলিয়ার সামাইর গ্রামে অভিযান চালিয়ে সেলিম মন্ডলের ভাই জুয়েল মন্ডলকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, সেলিম মন্ডলকে আটক করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
সাভারে ১৭ দিন ধরে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সেলিম মন্ডলের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার বকুল (২৬) নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় যুবলীগের ওই নেতা সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এর আগে রোববার (১৯ আগস্ট) সকালে নিখোঁজ আয়েশার ভাই বশির হোসেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানায় গিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আগুনে পোড়া এক নারীর মরদেহের ছবি দেখে তার বোন বলে ধারণা করছেন।
জানা যায়, চার বছর আগে সেলিম মন্ডলকে পছন্দ করে বিয়ে করেন বিরুলিয়ার সামাইর গ্রামের মৃত সোহরাব হোসেনের মেয়ে আয়েশা আক্তার বকুল। এরপর থেকে স্বামীকে নিয়ে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহলায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তারা। আয়েশার বড় ভাই বশির হোসেন জানান, গত ২৮ জুলাই বোন আয়েশা এলাকার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যায়। সেদিন সেলিম মন্ডল তার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। এ নিয়ে সেলিমের সঙ্গে আয়েশার কথা কাটাকাটি হয়।
সেসময় তার স্বামী তাকে ব্যবস্থা করতেছি বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনার চারদিন পর ২ আগস্ট থেকে আয়েশা নিখোঁজ হয়। পরদিন সেলিম সাভার থানায় বিষয়টি জানিয়ে একটি জিডি করেন। এদিকে ৩ আগস্ট সাভার উপজেলার পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাইরের বায়ড়া ইউনিয়নের জামালপুর এলাকার রাস্তার পাশ থেকে সারা শরীর আগুনে পোড়া অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে সিঙ্গাইর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সিঙ্গাইর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে আয়েশাকে না পেয়ে রোববার (১৯ আগস্ট) সকালে সিঙ্গাইর থানায় গিয়ে উদ্ধার হওয়া আগুনে পোড়া নারীর মরদেহের ছবি দেখে বশির ধারণা করেন এটি তার নিখোঁজ হওয়া বোন হতে পারে। এ ঘটনায় এদিন সন্ধ্যায় সাভারের বিরুলিয়া এলাকার সামাইর গ্রামে অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা সেলিম মন্ডলের ভাই বিরুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মন্ডলকে অস্ত্রসহ পুলিশ গ্রেফতার করে।
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম হোসেন বলেন, আগুনে পোড়া এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটি সাভার থানার নিখোঁজ হওয়া আয়াশা আক্তার বকুলের কিনা তা সাভার থানা পুলিশ এবং নিখোঁজের পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করবে। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, সেলিম মন্ডল তার দ্বিতীয় স্ত্রীর নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি জিডি করেছেন।