যা থাকছে বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭ ‘আকাশবীণা’য়

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সম্পূর্ণ নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রীমলাইনার উড়োজাহাজ। নতুন এই বিমানটিতে ফ্লাইটের সময়ে যেসব সুবিধা থাকছে, সেগুলো আগে ছিল না, এজন্য ড্রিমলাইনার ৭৮৭ কে বলা হচ্ছে স্বপ্নের উড়োজাহাজ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি থেকে নেওয়া হয়েছে এর নিবন্ধন।

রবিবার(১৯আগস্ট) বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করবে বিমানের প্রথম ড্রীমলাইনার। ড্রীমলাইনারকে ওয়াটার ক্যানন স্যালুটের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে। এ উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫টি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১ সেপ্টেম্বর এ ড্রিমলাইনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন জানিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বিডিমর্নিংকে বলেন,

একইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর রুটে ড্রিমলাইনারের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এর পরবর্তীতে ঢাকা-সিঙ্গাপুর এবং ঢাকা-কুয়ালালামপুরে নিয়মিতভাবে দুটি ফ্লাইট পরিচালিত হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিমানটি দেশে আনতে গত বুধবার সিয়াটলে বোয়িং কোম্পানির এভারেট ডেলিভারী ও অপারেশন্স সেন্টারে যান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বিডিমর্নিংকে জানান, ড্রিমলাইনারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, ৩০ থেকে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় ফ্লাইট পরিচালনা করলেও যাত্রীরা অনুভব করবেন মাটি থেকে ১৬ হাজার ফুটের দূরত্বের আবহ।

এতে ভ্রমণের ক্লান্তি তাদের স্পর্শ করবে না। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ক্লান্তিতে ভুগবেন না তারা। বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭ এর মধ্য দিয়ে বিমান বাংলাদেশ তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এক কথায় আমরা বলছি, বিমানযাত্রায় পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে আসছে ড্রিমলাইনার আকাশবীণা।

তিনি জানান, নতুন ড্রিমলাইনারগুলোতে যাত্রীদের জন্য ফ্লাইটের সময়ে যেসব সুবিধা থাকছে, সেগুলো আগে ছিল না। যেমন ইন্টারনেট ব্যবহার ও ফোন কল করার সুবিধা।

আর এসব সুবিধার জন্য এয়ারলাইন্সটি ইতোমধ্যে বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে। ফ্লাইট চলাকালীন যাত্রীরা থ্রিজি গতির ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন আর বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যাত্রীদের দেওয়া হবে ফ্রি ২০ মেগাবাইট ডাটা।

প্যানাসনিক অ্যাভিয়েশন করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে- যারা ২৫টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফারের কাজ করবে। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সার্ভিসটি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এয়ারক্রাফট আকাশ বা ভূমি যেখানেই থাকুক না কেন ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেটের আওতায় থাকবে জানিয়ে শাকিল মেরাজ বলেন, এয়ারক্রাফটের প্রাথমিক প্যারামিটার কিভাবে চলছে, কোন ফাংশন কিভাবে কাজ করছে- প্রতিনিয়ত তথ্য আপডেট হতে থাকবে।

এয়ারক্রাফটির কোনো টেকনিক্যাল ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি শনাক্ত করা যাবে এবং ভূমিতে ফেরা মাত্র তার জন্য আমরা ‘রেকটিফাই মেজার্স’ নিতে পারব, যেটা আমাদের অন্য কোনো উড়োজাহাজে নেই।

এছাড়া ড্রিমলাইনার ৭৮৭ এ রয়েছে থ্রিডি রুট ম্যাপ। এর মাধ্যমে ডিসপ্লেতে উড়োজাহাজটি যেখান দিয়ে উড়ে যাবে তার নিচের সব স্থাপনা দেখতে পাবেন যাত্রীরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২০০৮ সালে চারটি ড্রিমলাইনারসহ মোট ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২.১ বিলিয়ন ইউএস ডলারে চুক্তি করে বলে জানা যায়।

১০টি বোয়িং উড়োজাহাজের মধ্যে রয়েছে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেল চারটি এবং বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেল দু’টিসহ মোট ছয়টি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ বিমানকে সরবরাহ করেছে কোম্পানিটি।

বাকি থাকা চারটি ৭৮৭ উড়োজাহাজের প্রথমটি আজ ১৯ আগস্ট, পরেরটি আগামী নভেম্বর এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আরও দু’টি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে তারা।

প্রথমদিন থেকেই নিজস্ব বৈমানিকরা উড়োজাহাজটি চালাবেন। তারা সিঙ্গাপুরে বোয়িংয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ১৪ জন বৈমানিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এই সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শেয়ার করুন: