বিধিমালা জারির পর এবার চূড়ান্ত সার-সংক্ষেপও তৈরি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত সপ্তাহে আরো তিনটি কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। ফলে এখন চূড়ান্ত হলো ২৭৪ বেসরকারি কলেজের তালিকা।
এ তালিকা আজ-কালের মধ্যেই চূড়ান্ত অনুমোদন ও সরকারি আদেশ জারি (জিও) করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি কলেজ শাখা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির লক্ষ্যে তার দফতরে সার-সংক্ষেপ পাঠানো হচ্ছে।
এতে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর পরই এসব কলেজ ও সেগুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি সরকারীকরণের আদেশ জারিতে আর কোনো বাধা থাকবে না। ওই সার-সংক্ষেপ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসার পর পরই কলেজ সরকারীকরণের আদেশ (জিও) জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসব কলেজে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের পথে সর্বশেষ বাধা ‘আত্মীকৃত বিধিমালা ২০১৮’ জারি হয়েছে গত ৩১ জুলাই। এর পর প্রয়োজন ছিল কলেজগুলোকে সরকারীকণনের আদেশ জারির (জিও) জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি।
সেটিও এখন শেষ হতে চলেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাতীয়করণের জন্য তৈরি সার-সংক্ষেপ এখন সচিবের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর মন্ত্রীর স্বাক্ষরের পরই তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
মামলার কারণে আটকে যাওয়া যে আটটি কলেজ জাতীয়করণের তালিকার বাইরে ছিল, তার মধ্য থেকে তিনটি কলেজ জাতীয়করণ করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে,
শেষ মুহূর্তে মামলা নিষ্পত্তির কারণে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কলেজ, দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কাহারোল ডিগ্রি কলেজ ও খানসামা উপজেলার পাকেরহাট ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণ করতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেন।
পরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি দানপত্র দলিল (ডিড অব গিফট) মূলে সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন। অর্থ বিভাগ থেকে সরকারীকরণে অর্থ ছাড়ের সম্মতিও দেয়া হয়েছে।
বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১৬ সাল থেকে দফায় দফায় সর্বমোট ২৮৩টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণের জন্য মনোনীত করা হয়।
জাতীয়করণের পর এসব কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের অবস্থান ও মর্যাদা কী হবে তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষকেরা বলছেন, আত্তীকৃত শিক্ষকেরা ক্যাডারে প্রবেশ করতে পারেন না।
কারণ তারা বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক কোনো পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই কলেজে চাকরি করে আসছিলেন। এখন ঢালাও জাতীয়করণের সুযোগে তারা ক্যাডারভুক্ত হতে পারেন না।
সরকার তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দিলে তাতে আপত্তি নেই। তবে তাদের ক্যাডারভুক্তির কোনো সুযোগ নেই। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির তীব্র আপত্তি ও বিরোধিতার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৩১ জুলাই ‘সরকারীকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকৃত বিধিমালা ২০১৮’ জারি করেছে।
এ দিকে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি বৈঠক হয়েছে গত পরশু। বৈঠক সূত্র জানান,
‘সরকারীকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকৃত বিধিমালা ২০১৮’ নিয়েই, বৈঠকে মূল আলোচনা হয়েছে। তাতে ‘আত্তীকৃত বিধিমালা ২০১৮’-র নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন কমিটির সদস্যরা।
এ বৈঠক সম্পর্কে গতকাল বিকেলে সমিতির মহাসচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, এ বিধি প্রণেতাদের সাথে সমিতির পক্ষ থেকে দ্রুতই মতবিনিময় করা হবে।
ইতঃপূর্বে জারি করা অন্যান্য বিধিমালার সাথে নতুন জারি করা বিধিমালা কতটুকু সাংঘর্ষিক এবং এর আইনগত দিক বিবেচনায় নিয়ে শিগগিরই আমরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করব। এর বাইরে এখন আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।