কর রেয়াত কিভাবে গণনা করবেন? জেনে নিন...

আপনি জানেন কি কর রেয়াত আপনার করের পরিমান অনেকাংশে হ্রাস করে? কর রেয়াতের কথা শুনেছেন কিন্তু কিভাবে এই কর রেয়াত পাওয়া যায় তা জানেন না।

অথবা জানলেও কিভাবে তা গণনা করতে হয় তা জানেন না। কর রেয়াত গণনা করা খুবই সহজ। আপনি নিজে নিজেই আপনার নিজের কর রেয়াত কতো তা গণনা করতে পারেন।

এই লেখাটি থেকে আপনি কয়েক মিনিটের মধ্যেই জেনে যাবেন কিভাবে তা বের করতে হয়। নিচে একটি উদাহরণ দিয়ে কিভাবে কর রেয়াত বের করতে হয় তা দেখানো হয়েছে।চলুন তাহলে শুরু করি।

কর রেয়াত বের করার আগে আপনাকে জানতে হবে আপনার মোট করযোগ্য আয় কতো। কারন আপনি যে কর রেয়াত পাবেন তা আপনার সারা বছর ধরে বিনিয়োগকৃত অংকের উপর নির্ভর করে।

মোট করযোগ্য আয় কতো? আপনি সারা বছর ধরে যা আয় করেন তা থেকে আয়কর আইন অনুযায়ী কিছু অনুমোদিত খরচ বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হয়।

যেমন আপনি যদি চাকরিজীবী হন তাহলে বাড়িভাড়া, যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অংক বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করা হয়।

আবার আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে আপনার ব্যবসা থেকে আয় যা হয়েছে তা থেকে অনুমোদিত খরচ বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হবে। আপনি যে খাত থেকেই আয় করুন না কেন প্রথমে আপনি ধাপে ধাপে করযোগ্য আয় বের করে নিন।

ধরে নিলাম আপনি একজন চাকরিজীবী। তাহলে এবার আপনি ধাপে ধাপে চাকরি থেকে করযোগ্য আয় বের করে নিন। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের আয়কর বের করার নিয়ম একটু আলাদা।

আশা করছি আপনি আপনার করযোগ্য আয় বের করতে পেরেছেন।ধরে নিলাম আপনার করযোগ্য আয় ৯৫৪,০০০ টাকা। এই টাকার উপর আপনি একটি সীমা পর্যন্ত বিনিয়োগকৃত টাকার উপর কর রেয়াত পাবেন।

সর্বোচ্চ কতো বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন? আপনাকে কর রেয়াত পেতে হলে সবার আগে বিনিয়োগ করতে হবে। তবে সব বিনিয়োগ আয়কর আইন অনুযায়ী করের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হয় না।

আয়কর আইনে বলা আছে আপনি কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে। কেবল সেসব খাতে বিনিয়োগ করলেই আপনার বিনিয়োগ কর রেয়াত পাওয়ার জন্য প্রযোজ্য হবে।

বিনিয়োগের মধ্যে অনুদানও রয়েছে।আমরা অনেকেই সমাজের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অনুদান দিয়ে থাকি। আবার ধর্মীয় কারনেও অনুদান দিয়ে থাকি।

সরকার অনুদানে উৎসাহী করার জন্য কিছু কিছু খাত আয় কর আইনে উল্লেখ করে দিয়েছে। এই সাব খাতে আনুদানকৃত অর্থ আপনি বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন। এখন আপনি আয়কর আইন অনু্যায়ীই বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই আপনি বিনিয়োগ হিসেবে দেখিয়ে কর রেতায় সুবিধা পাবেন।

তাহলে আপনার বিনিয়োগকৃত সীমা কতো? ধারা ৪৪(২)(বি) এবং (সি) অনুযায়ী নিচের তিনটি অংকের কথা বলা হয়েছে। ০১। মোট আয়ের ২৫% (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) অথবা ০২। ১.৫ কোটি টাকা, অথবা ০৩। প্রকৃত বিনিয়োগ

উপরের এই তিনটি অংকের মধ্যে যেটি সবচেয়ে ছোট হবে সেটাই হবে আপনার বিনিয়োগকৃত অংক যার উপর নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। আমরা জেনেছিলাম আপনার মোট করযোগ্য আয় ৯৫৪,০০০ টাকা। তাহলে এর ২৫% হিসেবে আসে ২৩৮,৫০০ টাকা।

এখন আপনার প্রকৃত বিনিয়োগ যদি ২৩০,০০০ টাকা হয় তাহলে আপনি ২৩০,০০০ টাকা পর্যন্তই কর রেয়াত পাবেন। আবার যদি আপনার ২৫০,০০০ টাকা প্রকৃত বিনিয়োগ হয় তাহলে আপনি ২৩৮,৫০০ টাকা পর্যন্তই কর রেয়াত সুবিধা পাবেন।

অর্থাৎ আপনি সর্বোচ্চো ২৩৮,৫০০ টাকা পর্যন্তই কর রেয়াত পাচ্ছেন। এই টাকার উপর আপনি নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত পাবেন। যা আপনার মোট করদায় থেকে বাদ যাবে।

কর রেয়াত কতো? আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-তে তিনটি ধাপে কর রেয়াত নির্ণয় করার কথা বলা হয়েছে। নিচের তিনটি ধাপে আপনি কর গণনা করবেন। ০১। প্রথম ২৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১৫% হারে

০২। পরবর্তী ৫০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১২% হারে এবং ০৩। অবশিষ্ট বিনিয়োগকৃত টাকার উপর ১০% হারে।

যেহেতু আপনার বিনিয়োগকৃত টাকা ২৩৮,৫০০ এবং এটা প্রথম ধাপেই পড়ে যাচ্ছে তাই এই সম্পূর্ণ টাকার উপর ১৫% হারে কর রেয়াত পাবেন। তাহলে আপনার কর রেয়াতের পরিমান হলো ৩৫,৭৭৫ (২৩৮,৫০০X১৫%) টাকা।

অর্থাৎ আপনার মোট করদায় থেকে ৩৫,৭৭৫ টাকা বাদ যাবে। আপনার করযোগ্য আয় ৯৫৪,০০০ টাকার উপর মোট করদায় ৮৫,৬০০ টাকা। এই করদায় থেকে কর রেয়াত ৩৫,৭৭৫ টাকা বাদ যাবে।

তাহলে আপনার নীট করদায় হলো ৪৯,৮২৫ টাকা। লক্ষ্য করুন, কর রেয়াতের ফলে আপনার করদায় অনেকাংশে কমে গেছে। তাই আপনি যদি একটু জেনে বুঝে ট্যাক্স প্ল্যান করে আপনার টাকা বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনি বিশাল করদায় থেকে বেচে যাবেন।

আর বিনিয়োগের দুইটা সুবিধা আছে। এক, আপনার সঞ্চয়ের পরিমান বাড়ছে যা আপনি একটি সময় পড়ে বিশাল টাকার মালিক হচ্ছেন। সেই টাকা দিয়ে আপনি বড় কোন কাজ করতে পারেন।

দুই, আপনার করদায় অনেক কমে যাচ্ছে। মাত্র নতুন বছর শুরু হয়েছে। এখনি ট্যাক্স প্ল্যান করে কর রেয়াতের জন্য নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন।

শেয়ার করুন: