খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘অসুস্থতা তাঁর নিত্যসঙ্গী। প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো ওষুধ খাচ্ছেন না। সরকার তাঁর চিকিৎসা করাতে চায়, কিন্তু তিনি ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া রাজি হচ্ছেন না।’ আজ বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা মারার নাশকতার মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আবেদন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদনের শুনানিতে আদালতের কাছে এ যুক্তি তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এখন যে ধরনের অসুস্থতার কথা বলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন চাওয়া হচ্ছে, এমন অসুস্থতা নিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই অসুস্থতার কথা বললে হবে না।’ অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, ‘প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো ওষুধ খাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চেয়েছে। কিন্তু তিনি ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া চিকিৎসা নিতে রাজি হননি।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘গাড়ি পুড়িয়ে কুমিল্লার নাশকতায় সাতজন লোককে পুড়িয়ে মারা হলো। সাধারণ মানুষের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? একজন হত্যা মামলার আসামিকে কোনোভাবে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।’ এর আগে জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ‘মাই লর্ড, নাশকতার সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ঘটনার সময় খালেদা জিয়া গুলশান অফিসে বন্দি ছিলেন।
মামলার এফআইরে তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু অভিযোগ গঠনের সময় তাঁর নাম যোগ করা হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়। তিনি অসুস্থ, তাঁর চিকিৎসা পর্যন্ত করানো হচ্ছে না। নারী ও অসুস্থ বিবেচনায় তাঁকে হাইকোর্ট জামিন দেওয়া হয়েছে। মাই লর্ড, এ বিবেচনায় আমরা আশা করি তাঁকে জামিন দেবেন।’ এ মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীনও বক্তব্য দেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১২ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে গত ৬ আগস্ট বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেন। ওই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ মামলায় গত ১ জুলাই খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ৮ আগস্ট বহাল রাখেন কুমিল্লার আদালত। এরপর খালেদা জিয়া হাইকোর্টে এ মামলায় জামিন আবেদন করেন। মামলার বিবরণে জানা যায়,২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে ২০ দলীয় জোটের অবরোধের সময় চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে একটি বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা।
এতে আটজন যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান, আহত হন ২০ জন। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ছয়জন নেতাকে হুকুমের আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে তিনজন মারা যান, পাঁচজনের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়াসহ অন্য ৬৯ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন।