ঈদে কি বাড়ি যেতে পারবেন সবাই?

বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ফিটনেস বিহীন গাড়ি অথবা লাইসেন্স বিহীন চালকদের উপর যে ধরপাকড় হচ্ছে, তার ফলে এবারের ঈদে ঢাকা থেকে সারা দেশে যাওয়ার গাড়ির সংকট হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বহু পরিবহন কোম্পানি অন্য বছরের তুলনায় ঈদে তাদের বাস ও ট্রিপের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ও প্রফেশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স করানোর হিড়িক পরে গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম কেমন চলছে? ঢাকার প্রান্তে গাবতলি বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় অন্য সময়ের তুলনায় যেন একটু নিরিবিলি। এখনো গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কম। ৫ তারিখ থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিন ধার্য করেছিলো মালিকদের একটি অংশ কিন্তু তা আবার স্থগিত করে দেয়া হয়।

বেশিরভাগ পরিবহন কোম্পানি ঈদের টিকেট দেয়া শুরু করেনি। গাবতলিতে প্রায় যতগুলো কাউন্টারের কর্মীদের সাথে কথা হল তারা সবাই একই ধরনের পূর্বাভাস দেন।

দিগন্ত পরিবহনের আব্দুর রহমান বলছেন, "এবার বহু লোককে ঢাকায় থেকে যেতে হবে। ঈদে আমাদের ২৯ ট্রিপ গাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কমিয়ে দশটা করে দেয়া হয়েছে। কারণ গাড়ি নাই।"

তিনি আরও বলছেন, "যেসব গাড়ির ফিটনেস আছে শুধু সেগুলো ছাড়া হচ্ছে আর যেগুলোর ফিটনেস নাই সেগুলোর কাগজপত্র করতে দিয়েছে মালিক। এবারে গাড়িতে নতুন রঙ করার প্রবণতা কম। আর নতুন রঙ করলেও গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকতেই হবে। সেটা নিশ্চিত হয়েই আমরা গাড়ি ছাড়তেছি।"

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী দেশে নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা প্রায় ৪৪ হাজার। কিন্তু এর মধ্যে ২২ হাজারেরই কোন ফিটনেস সনদ নেই। মিনিবাসের অবস্থাও একই রকম।

সারা দেশে নিবন্ধিত সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা সাড়ে ৩৫ লাখের মতো। কিন্তু বিআরটিএর ইস্যু করা লাইসেন্স প্রায় পঁচিশ লাখের মতো। ঈদের আগে এত গাড়ির ফিটনেস সনদ তৈরির কাজ বা এত ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার কাজ কি শেষ হবে?

বিভিন্ন বাসের কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তা মনে করছেন না। তারা নিজেরাই বলছেন এবার ঈদের সময় বাসের সংকট হবে। গাবতলিতে ঈগল পরিবহনের খন্দকার সুমন বলছেন, "এবার ঈদের সময় অনেক বেশি সংকট তৈরি হবে। সব কোম্পানির একই অবস্থা।"

বিআরটিএ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেখানে গাড়ির ফিটনেস সনদ ও প্রফেশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স করানোর ব্যাপক ভিড় বেড়েছে।

বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জানিয়েছেন, "শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক কার্যক্রমের কারণে পুলিশি তৎপরতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে পাশাপাশি আমাদের মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের নিয়মিত যে কাজগুলো আছে তার গড় করলে ৬০ শতাংশের মতো বেড়ে গেছে।"

মি. রব্বানী বলছেন, "এত চাপ কভার দেয়ার জন্য সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত আমাদের অফিস খোলা রাখা হচ্ছে। আমাদের নিয়ম হচ্ছে একই দিনে ফিটনেস সনদ ডেলিভারি দিয়ে দেয়। যেই আসবে তাদের কাজ করে দিতে আমরা সচেষ্ট আছি এবং আমাদের সক্ষমতাও আছে। ঈদের আগে আশা করি আমরা এটা কভার করতে পারবো।"

ফিটনেস সনদ হয়ে গেলেও গাড়ির স্বাস্থ্য আসলেই সকল দিক থেকে ঠিক আছে কিনা বা আদৌ গাড়িগুলোর আয়ুষ্কাল আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার সক্ষমতা বিআরটিএর নেই। ফি জমা দিলে পরিদর্শক খালি চোখে দেখে গাড়ির সনদ দিয়ে দেন। অনেক সময় সব গাড়ির শুধু হুড একবার খুলে দেখারও সময় হয়না পরিদর্শকদের।

গাড়ির সংকটে ইতিমধ্যেই ভোগান্তিতে পরতে শুরু করেছেন যাত্রীরা। পরশ কুমার ঘোষ ঝিনাইদহের জন্য টিকেট কাটতে এসেছেন। তিনি বলছেন, "আমরা টিকিট সম্পর্কে যে তথ্য পাচ্ছি তা হল টিকেট নাই, গাড়িও নাই। যা শুনতে পাচ্ছি ওদের গাড়ি শুধু যেগুলোর কাগজপত্র ঠিক আছে শুধু সেগুলো ছাড়া হচ্ছে।"

পরিবহন মালিকরা তাদের উপর চলমান কড়াকড়ির ক্ষেত্রে এই সংকটকে উল্টো কড়াকড়ি তুলে নেয়ার উসিলা হিসেবে ব্যবহার করবে কিনা সেটি নিয়েও আশংকা তৈরি হয়েছ।

শেয়ার করুন: