বিমানবন্দর

এয়ারপোর্ট রোড: গভীর রাতের অশরীরি নারী!

মাঝে মধ্যেই এফএম রেডিওর মধ্যরাতের অনুষ্ঠানে চর্চা হয় স্থানটির। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বাংলাদেশ বিমান অফিস থেকে জসিমউদ্দিন রোড পর্যন্ত পথটুকুই শিরোনামে কথিত আলোচিত স্থান। এখানে নাকি গভীর রাতে এক অশরীরি নারীকে দেখা যায়। দিনের বেলার মহাব্যস্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিশাল রাস্তা রাতের গভীরে হয়ে পড়ে অনেকটাই যেন একাকী, নিঃসঙ্গ। ঘটনা নাকি ঘটে ঠিক তখনি।

মাঝে মধ্যে তীব্র গতিতে বাতাসে ঝড় তুলে ছুটে চলা গাড়িগুলোর সামনে ভেসে আসে সাদা পোশাকে আবৃত এক নারী। অমন আচমকা ওই দৃশ্যে গায়ের রোম কাটা দিয়ে ওঠে ওই পথে চলাচলকারীদের। ছুটন্ত গাড়ির দিকে তার ওই ছুটে আসাটা পুরোটাই অপার্থীব বলে জানান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদাররা। তাদের বর্ণনায়, এই ছুটে আসাটা মানুষের দৌড়ানোর সঙ্গে মিলে না, মনে হয় ওই নারী বাতাসে ভেসে আসছেন। এটা দেখে নিশুতি রাতের একাকী চালক ভড়কে যান, ব্রেক কষে সামনের ‘নারীকে বাঁচানোর’ চেষ্টা করাটা অসম্ভব মনে হতে থাকে।

কারণ, ছুটন্ত গাড়ির উল্টোদিক থেকে তিনিও ছুটে আসেন বায়বীয় গতিতে। এমন অবস্থায় কাউকে বাঁচানো অসম্ভব। তবে একেবারে শেষমুহূর্তে দেখা যায়- ছুটে আসা অবয়বটি বাতাসের মতো মিলিয়ে গেছে, গাড়িতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বা ঠিক আগ মুহূর্তে। অমন ভীতিকর গা শিউড়ানো অভিজ্ঞতার মুখে পড়ে প্রায়ই ওই রাস্তায় একাকী চলাচলরত চালকরা শিকার হন অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা অল্পের ওপর দিয়ে গেলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাণহানিও ঘটেছে বলে দাবি করেন স্থানীয়দের কেউ কেউ।

যারা এসব ঘটনা বিশ্বাস করেন, স্থানীয় সেই সূত্রগুলোর মতে, বেশ কয়েকবছর আগে ওই স্পটে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় একটি পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য। রাতের অশরীরি নারী নাকি তাদের একজন। এই কাহিনী বর্ণনাকারীদের মতে, তার ও তার পরিবারের হত্যাকারী চালকের ওপর প্রতিশোধ নিতে নিশুতি রাতে উদয় হন ওই নারী। তবে শারীরিকভাবে কারও ওপর কোনো আঘাত বা হামলার কথা শোনা যায়নি। তাদের মতে, ওই অশরীরি শুধু ভয় দেখিয়ে চালকদের রাস্তা থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে চায়। এর ফলে ঘটে দুর্ঘটনা।

এই অশরীরির আক্রমণ থেকে বাঁচার কায়দা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে যা জানা গেছে তা হলো, রাতের বেলা ওই পথে শুধু একা চলাচলকারী চালকরাই এমন পরিস্থিতির শিকার হন। দেখা যায় রাস্তার ঠিক মাঝখান দিয়ে হেঁটে আসছেন শুভ্রবসনা ওই নারী। কারও কারও মতে- ওই সময়ে গাড়ির জানালা বন্ধ রাখলে সমস্যা এড়ানো যায়। এরকম ঘটনায় ভয় পেলেই বিপদ বেড়ে যায়। তাই ভয় না পেয়ে শুধুমাত্র মনোযোগ স্থির রাখলেই বিপদ এড়ানো যায়। ঠাণ্ডা মাথায় দ্রুত রাস্তা পাড় হয়ে গেলেই হয়। ওটা শুধু ভয় দেখাতে চেষ্টা করে- শারীরিক কোনো ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই।

উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা সাদেক হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি এরকম কোনো ঘটনার কথা শুনেননি। তবে নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ কেউ এমন ঘটনার কথা শুনেছেন বলে জানান। বিষয়টি রহস্যজনক, এবং এর অকাট্য প্রমাণ দেওয়া কঠিন। তবে ওই রুটে নিয়মিত ট্যাক্সিক্যাব, সিএনজি চালান এমন ড্রাইভারদের অনেকেই বিষয়টিকে সত্য বলে দাবি করেন। তাদের মতে, ওই রুটে রাস্তায় হামেশাই পড়ে থাকতে দেখা যায় গাড়িরর কাঁচের টুকরা। এর অর্থ ওখানে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে এবং এগুলো ঘটে গভীর রাতে। তাই ঘটনার পর থানা-পুলিশ বা হাসপাতাল এড়িয়ে ঘটনার শিকাররা এলাকা থেকে অনেকটাই যেন পালিয়ে বাঁচেন। এসব ঘটনার জন্য দায়ী ওই অশরীরি। কেউ কেউ একাধিক অশরীরির কথাও বলেন।

পুলিশের বক্তব্য: কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশ কী জানে? এমন প্রশ্ন করলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি ওমর ফারুক মঙ্গলবার বলেন, এলাকাবাসী বা পথচারীরা কেউ কখনো এমন অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেনি। তাই এমন কিছু আমার জানাও নেই। এ প্রসঙ্গে ফাহাদ নামে আরেকজন জানান, তিনি গত ১৭ বছর ধরে উত্তরার বাসিন্দা এবং ওই পথে রাতে অনেকবার যাতায়াত করেছেন। সেরকম কিছু তার নজরে পড়েনি। তবে তিনি এও বলেন, এমন হতেও পারে। আমি আসলে জানি না।

শেয়ার করুন: