প্রথমবারের মতো সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন আল কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান তার সাক্ষাৎকার ভিত্তিক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন বিন লাদেন সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা তথ্য।
বিন লাদেনের জীবন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে কৌতুহল ছিলো সংবাদ মাধ্যমের কিন্তু তারা কখনোই সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান দায়িত্ব নেয়ার পর সৌদি সরকারের উদ্যোগেই বিন লাদেনের পরিবারের কথাগুলো মিডিয়ার কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
লাদেন পরিবার সৌদি আরবের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবার। এতদিন পর সাক্ষাৎকারের অনুমতির কারণ সম্পর্কে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব ও লাদেন পরিবারে বিন লাদেনের ঘটনাটি একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।
সৌদি কর্মকর্তারা মনে করছেন, লাদেন পরিবারকে তাদের কাহিনি বলার সুযোগ দিলে তারা একটি বার্তা দিতে পারবেন- আর তা হলো ওসামা তাদের কোনও এজেন্ট ছিলেন না। সৌদি আরবের সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলেন, ওসামা সৌদি সরকারের সমর্থন পেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার সূত্র ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিন লাদেন ইস্যুটি জোরালো হয়। ঘটনার পরপরই সন্দেহের তীর আল কায়দার ওপর গিয়ে পড়ে।
প্রাথমিকভাবে হামলার সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয় অস্বীকার করলেও ২০০৪ সালে হামলার দায় স্বীকার করে নেন আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। পরে ২০১১ সালে মার্কিন সিল টিমের অভিযানে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন।
ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নিয়েছে। বিমান হাইজ্যাকের ঘটনায় জড়িত ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই ছিলেন সৌদি আরবের নাগরিক। যে কারণে সৌদি সরকার চাইছে বিষয়টিতে তাদের কোন যোগসাজেশ ছিলো না সেটি স্পষ্ট করতে।
দ্য গার্ডিয়ান প্রতিবেদক মার্টিন চুলব জানান, জুন মাসের শুরুতে তিনি লাদেন পরিবারের সাথে প্রথম কথা বলেন। ওই সময় তাদের সাথে সৌদি সরকারের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। যদিও তিনি আলোচনায় কোনও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেননি।
লাদেন পরিবার দ্য গার্ডিয়ানের সাথে আলোচনার বিষয়ে বেশ সতর্ক ছিল। বেশ কয়েকদিন আলোচনার পর তারা সাক্ষাৎকারে রাজি হন। ওসামার সৎভাইদের মাঝখানে বসে আলিয়া নিজের প্রথম সন্তান ওসামাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি জানান, লাজুক হলেও সে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। ২০ বছরের দিকে সে শক্তিশালী, উদ্যমী ও ধার্মিক ব্যক্তিতে পরিণত হয়।
ছেলেকে নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলে আলিয়া ঘানেম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, সে আমার কাছ থেকে অনেক দূরে ছিল, তাই আমার জীবন ভীষণ কঠিন ছিল। সে খুব ভালো ছেলে ছিল এবং আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো।
লাদেনের মা সৎবাবাকে দেখিয়ে জানান, তিন বছর বয়স থেকেই ওসামাকে বড় করেছেন তিনি। তিনি ভালো মানুষ এবং ওসামার কাছেও ভালো ছিলেন।
আলিয়া দাবি করেন, জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়েই ওসামার জীবনধারা পাল্টে যায়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকেরাই তাকে বদলে দেয়। সে অন্যরকম মানুষে পরিণত হয়।
আমি তাকে সবসময় এদের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলতাম। কিন্তু সে কখনোই আমাকে কিছু বলত না। কারণ, সে আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসত।