হাসতে নাকি জানেনা কেউ, কে বলেছে ভাই? এই শোন না কত হাসির, খবর বলে যাই।এ পঙক্তিমালা আমরা রোকনুজ্জামানের হাসি কবিতাতে পাই। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ শুনার পরেও নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের এই অট্টহাসির কারণ কি?
রাজধানী ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় জাবালে নুর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনায় যখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের স্বজনরা, ঠিক সে সময়ে মন্ত্রীর মুখে দেখা গেল প্রাণবন্ত হাসি।
সাংবাদিকরা যখন তাকে এই দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করলেন,তিনি স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন হাসি মুখে। হাসতে হাসতে তিনি বললেন,দোষীদের শাস্তির কথা।
সরকারের দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রীর এমন অট্টহাসির ভিডিউ সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে।মন্ত্রীর এমন হাসিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
মোস্তফা সারওয়ার নামের একজন লিখেছেন, ”এতো কুৎসিত লাগে নাই কোন হাসি, এই জীবনে। অনেকে বলেছেন ভাই, মন্ত্রীর তো আর দোষ নাই, দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনা। নিশ্চয়ই।
কিন্তু আপনি যখন এই সব বদমায়েশদের পাশে দাঁড়ান, দাঁত কেলিয়ে কুযুক্তি দেন, তখন আপনি আরো দশ হাজার পরিবহন শ্রমিককে দূর্বৃত্ত বানিয়ে দেন।
তখন রাজপথকে তাদের স্টেডিয়াম বানিয়ে খেলে, আর মাঝখান থেকে পিঁপড়ার মতো আমাদেরকে একটু থেতলে দেন।এভাবে আশকারা দিতে দিতে আপনি একটা দূর্বৃত্ত বাহিনী গড়ে তোলেন।
এই নির্লজ্জ লোকটাকে সরকার বরখাস্ত করে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে না? (নোট:সরকার আন্তরিক হইলে, আইন প্রণয়ন এবং প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করলে, এই সব বদমায়েশ সোজা হবে মাত্র একদিনে।
সরকার সত্যি সত্যি চাইলে পরিবহন খাতের ব্যবস্থাপনা বদলে ফেলাও সম্ভব,যদি এই রকম দূর্বৃত্ত সরকারের ভিতরে থেকে ধর্মঘটের চাল না চালে এবং সরকার তাতে কাবু না হয়।”)
মারুফ পারভেজ নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ”মন্ত্রী যখন অট্টহাসি দিয়ে দোষীদের শাস্তির কথা কথা বলে, সেকথা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সাধারণ মানুষের আর বুঝতে বাকি নেই।”
এম কে জামান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন,” যাই বলুন না কেন মন্ত্রী শাজাহান খান কিন্তু
নিমক হারাম না।শ্রমিক নেতা সে, শ্রমিকের পয়সা খায়
তাই শ্রমিকের পক্ষেই কথা বলে।”
২৯ জুলাই,রবিবার সচিবালয়ে মংলা বন্দরের জন্য মোবাইল হাররার ক্রেন ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন মন্ত্রী। সাংবাদিকরা মন্ত্রীকে দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি হেসে হেসে উত্তর দেন।
এক সাংবাদিক সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে, মন্ত্রী বলেন,”এ প্রোগ্রামের সঙ্গে কি এটা রিলেটেড? আমি শুধু এটা বলতে চাই, যে যতটুকু অপরাধ করবে, সে সেভাবেই শাস্তি পাবে।
“ভারতের একটি সড়ক দুর্ঘটনার উদাহরণ টেনে অনেকটা অট্টহাসিতে মন্ত্রী বলেন,’আপনারা লক্ষ করেছেন,ভারতের মহারাষ্টে গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গেছেন।
এখন সেখানে কী আমরা যে ভাবে এগুলোকে নিয়ে কথা বলি, এগুলো কি ওখানে বলে। আমি মনে করি, এ বিষয়ে যদি আপনারা আলোচনা করতে চান, পরে আলোচনা হবে। ‘
ঘটনাস্থলে একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বা বলেন,’এই পরিবহনগুলোর নাম দেখেছেন? ইসলামের পবিত্র নাম গুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
জাবালে নুর(আলোর পাহাড়), নুরে মক্কা(মক্কার আলো), নুরে মদিনা (মদিনার আলো), বোরাক (রাসূল সা. এর মিরাজ গমণের বাহন) এসকল তাৎপর্যপূর্ণ নাম ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে ফিটনেস বিহীন, লাইসেন্স বিহীন এসব গাড়ি। এটা কি উচিত হচ্ছে? ”
পরিবহন খাতের একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ঘাতক বাস জাবালে নুরের মালিকের নাম নান্নু। তিনি সম্পর্কে নৌ মন্ত্রীর শ্যালক। নান্নু জাবালে নুর কম্পানির একজন ডিরেক্টর।
তাহলে শোকাহত সাধারণ মানুষ কি ভেবে নিবে?মন্ত্রীর এই হাসির আসল রহস্য কি তাহলে শ্যালককে বাঁচানোর অভিনব কৌশল? না পরিবহন শ্রমিকদের প্রধান হিসেবে তাদের রক্ষা! কোনটা?
উল্লেখ্য যে দুপুর ১২ টার দিকে হোটেল রেডিসনের উল্টো দিকের সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় ‘জাবালে নুর’ পরিবহনের একটি বাস। এতে ঘটনাস্থলে ছাত্রীসহ দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১২ জন। নিহত দুজনই শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।