বেশ কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে এক দম্পতির অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল শিশু গৃহপরিচারিকা মাহী। এখন জানা যাচ্ছে, ঐ দম্পতি আদৌতে কোনো বিবাহিক বন্ধনে জড়াননি। তারা নিজ নিজ স্বামী ও স্ত্রী রেখে পালিয়ে আলাদাভাবে বসবাস করছিলেন।
গত ১৯ জুলাই রাতে ৮ বছর বয়সী মাহি নামে এক শিশু গৃহপরিচারিকাকে নির্মম নির্যাতন করার অভিযোগে ফতুল্লা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে আতাউল্লাহ খোকন ও উর্মিকে। তখন সবাই জানতেন তারা স্বামী-স্ত্রী।
কিন্তু এ ঘটনার আট দিন পর যখন রেজওয়ানা চৌধুরী খোকনের ভাড়া ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে আসবাবপত্র নিতে আসেন, তখন সবাই জানতে পারেন- খোকন-উর্মি স্বামী-স্ত্রী নন, তারা লিভ টুগেদার করছেন।
এদিকে শিশু গৃহকর্মী মাহিকে নির্মম নির্যাতন করার অপরাধে বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন খোকন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় খোকন ও উর্মিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করলে আদালত খোকনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উর্মি সাত মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা দাবি করায় তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
বাড্ডার শাহজাদপুরের রেজওয়ানা চৌধুরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলেন ইসদাইরের আতাউল্লাহ খোকন। বেকার জেনেও খোকনকে সবার অমতে বিয়েও করেন রেজওয়ানা।
তিনি ভেবেছিলেন, বিয়ের পর সংসার বিবেচনায় কিছু একটা করবেন খোকন। ভালোই কেটে যাবে তাদের ভালোবাসার সংসার। রেজওয়ানা চৌধুরীর এমন বিশ্বাস বাস্তবে মেলেনি।
কোনো কাজকর্মও খোকন করেননি। বাবার করা একটি বাড়ির ভাড়া দিয়েই বিলাসি জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন খোকন। স্ত্রীর কোনো ভরণপোষণই তিনি বহন করেননি।
এরমধ্যে স্বামীকে নিয়ে রেজওয়ানা তার বাবার বাড়ি শাহাজাদপুরে ওঠেন। তাদের কোলজুড়ে আসে একে একে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। নানা ছলচাতুরি করে একটি প্রিমিও গাড়িও কিনেন খোকন। এদিক-সেদিক নিজেকে ধনাঢ্য পরিবারে সন্তান হিসেবে জাহির করতে শুরু করেন তিনি।
এরইমধ্যে শ্বশুরবাড়ি শাহাজাদপুরে থাকা অবস্থায়ই পার্শ্ববর্তী বাড়ির ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়ার সুন্দরী স্ত্রী উর্মিকে তার প্রেমের জালে জড়ান খোকন।
বিষয়টি একপর্যায়ে পরকীয়ায় রূপ নিলেও গুণাক্ষরেও জানতে পারেননি খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা এবং উর্মির স্বামী ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রাইভেটকারে করে খোকন এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে থাকেন সোহাগের স্ত্রী উর্মিকে নিয়ে।
খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা বলেন, ‘তাদের মধ্যে কী সম্পর্ক চলছিল তা শুরুতে কেউ বুঝতে পারিনি। এক পর্যায়ে যখন খোকন বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়, তখন জানা যায় পাশের বাড়ির সোহাগ মিয়ার স্ত্রী উর্মিও নেই! আর তখনই বিষয়টি আস্তে আস্তে খোলসা হতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পর উর্মির স্বামী সোহাগ তার স্ত্রীকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ফিরিয়ে নেয়ার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা পর্যন্ত করে।
আমিও অনেকবার বুঝিয়েছি, সন্তানদের কথা ভেবে মামলাতেও যাইনি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। তারা দুজন বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইর আনন্দনগর এলাকার শহীদুল্লাহর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে রেজওয়ানা বলেন, ‘বাবা-মায়ের অমতে একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করে প্রথম ভুল করেছি। দ্বিতীয় ভুল ছিল একে একে তিনটি সন্তান নেয়া।
তাই ভুলগুলো শুধরে তার সাথেই থেকে যাব ভেবেছি। সে ফিরে আসবে ভুল বুঝতে পেরে, এ জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষার প্রহরও গুণছিলাম। কিন্তু খোকন আসে না।’
তিনি বলেন, ‘কোনো রকম খরচ বহন করা তো দূরের কথা আমিসহ সন্তানদের কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। এমন পরিস্থিতি আদালতে ভরণপোষণের মামলা করার প্রস্তুতি যখন নিচ্ছি, তখনই সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি একজন শিশু গৃহপরিচারিকাকে নির্মম নির্যাতন করে পুলিশে আটক হয়েছে খোকন।’
খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা বলেন, ‘আমার তো কোনো অপরাধ ছিল না। আমি তো কেবল ভালোই বেসেছিলাম। এ কারণে এভাবে আমাকে খেসারত দিতে হবে! এটাই কি ভালোবাসার প্রতিদান?’
‘তবে এটুকু বলতে পারি, খোকন আমার এবং আমার সন্তানদের জীবন নষ্ট করেছে। উর্মি তার স্বামীর জীবন নষ্ট করেছে। আর সেই সাজা স্বরূপ আজ তারা কারাগারে। আমি তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার চাই’ যোগ করেন তিনি।