ইমরানের জয়কে কীভাবে দেখছেন বর্তমান ও সাবেক স্ত্রীরা

পাকিস্তানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। দেশটির জাতীয় পরিষদের (এনএ) নিম্নকক্ষের ২৭২ আসনের মধ্যে ১১৯টিই পেয়েছে তার দল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পাকিস্তানের এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কই হচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯২ সালে কিংবদন্তি এই পাকিস্তানি ক্রিকেটারের হাত ধরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে পাকিস্তান। পরে খেলা ছেড়ে তিনি নাম লেখান রাজনীতিতে। সেখানেও পেয়েছেন সাফল্য।

বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক থেকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী। এমন সাফল্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, রাজনীতিকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার।

ইমরানের এমন সাফল্য়ে উচ্ছ্বসিত সাবেক ও বর্তমান স্ত্রী। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দ্বিতীয় ও সাবেক স্ত্রী রেহাম খান।

সাবেক ক্রিকেটারের জয়ে প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ (৪৪) গর্ব করে বলেন, ‘আমার ছেলের বাবা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।’

বর্তমান স্ত্রী বুশরা মানেকা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। কিন্তু রেহাম উল্টো সুরে গেয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘যেন এক নায়কের দুঃখজনক পতন।’

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় জেমিমা লিখেন, ‘২২ বছর ধরে অপমান, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের পর আমার সন্তানের বাবা পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।

দৃঢ়তা, বিশ্বাস, পরাজয় মেনে না নেওয়ার এক অবিশ্বাস্য শিক্ষা এটি। কেন তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন, তা স্মরণ রাখাই এখন প্রথম চ্যালেঞ্জ। অভিনন্দন।’

১৯৯৫ সালে জেমিমাকে বিয়ে করেছিলেন ইমরান। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পাকিস্তানের লাহোরে থাকতেন ব্রিটিশ এই নাগরিক। কিন্তু ইহুদি পরিবারে জন্ম হওয়ায় পাকিস্তানের মানুষ তাকে মেনে নিতে পারেনি। ৯ বছরের মাথায় ২০০৪ সালে ইমরান-জেমিমার বিচ্ছেদ হয়।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রেহাম খানকে বিয়ে করেন ইমরান। তাদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ১০ মাস। ২০১৫ সালের অক্টোবরেই ভেঙে যায় তাদের সংসার।

জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সেই রেহাম খানের কারণেই একের পর এক বিতর্কের মুখে পড়েন ইমরান। তার বিরুদ্ধে যৌন আসক্তি ও সমকামিতার মতো স্পর্শকাতর অভিযোগ আনেন রেহাম।

স্ত্রীর এমন অভিযোগের পরও ইমরানের ওপর আস্থা রেখেছে পাকিস্তানের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশের জনগণ ইমরানের পক্ষে রায় দিলেও রেহামের দাবি, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য সব সততা বিসর্জন দিয়েছেন ইমরান খান। তিনি ইমরানকে মাদকাসক্ত ও অসৎ বলেও অভিহিত করেন। রেহামের ভাষ্য, ইমরান ইলেক্টেড নন, সিলেক্টেড প্রধানমন্ত্রী।

ইমরান খান আইনের তোয়াক্কা করেন না উল্লেখ করে রেহাম বলেন, ‘ইমরান বিরোধী স্বর শুনতে মোটেও অভ্যস্ত নন। তাই তার কথার বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলতে পারিনি। সেভাবে ঘর করাও আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পাকিস্তানকে এখন তার সঙ্গেই ঘর করতে হবে।’

‘এই মুকুটের জন্য তাকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হয়েছে, হারাতে হয়েছে সততা। এই আসনে বসতে তার সব সততা বিসর্জন দিতে হয়েছে। অনেক কিছু মানিয়ে নিয়ে, ছাড় দিয়ে, সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতা পেতে হয়েছে। এ যেন এক নায়কের দুঃখজনক পতন’, যোগ করেন রেহাম।

স্বামীর এমন জয়ে প্রথমে কোনো মন্তব্য না করলেও শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছেন ইমরানের তৃতীয় ও বর্তমান স্ত্রী বুশরা মানেকা। পাকিস্তানিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতির উদ্দেশে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহ এই জাতিকে এমন এক নেতা দিয়েছেন, যিনি এদের দেখাশোনা করবেন।’

নিপীড়িত, বঞ্চিত নারী, বিধবা ও এতিমদের উদ্দেশে বুশরা বলেন, ‘নতুন নির্বাচিত নেতা এখন আপনাদের রক্ষা করবেন। তিনি মানুষের অধিকার ও স্বার্থের কথা মাথায় রাখেন এবং দেশবাসীর মঙ্গলে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

শেয়ার করুন: