বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় একটি প্রাইভেট হাসাপাতালের এক হাতুড়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এভাবে ভুল পদ্ধতিতে অপারেশনের অভিযোগ উঠেছে। বোরকা পড়া (মাঝে) রোগী আছিয়া খানম। আমাদের সময় রোগীর শরীর অবশ না করেই শোয়ানো হয় অপারেশনের বিছানায়।
এরপর একাধিক নার্স ও আয়া চেপে ধরেন তার হাত-পা। এতেও কাজ না হওয়ায় মুখে বাঁধা হয় স্কচটেপ! এভাবে অপারেশ করিয়ে দ্রুত রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে। তবে ওই চিকিৎসক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এভাবে অপারেশনের কারণে আছিয়া খানম নামের ওই রোগী এখন চরম অসুস্থতা নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ঘটনায় রোগীর আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অসুস্থ গৃহবধূ ও তার স্বজনরা আগৈলঝাড়া সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন,উপজেলার চাঁদত্রিশিরা গ্রামের আবদুল খালেক মিয়ার মেয়ে আছিয়া খানমের সঙ্গে এক বছর আগে বিয়ে হয় কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামের সাব্বির মিয়ার।
বিয়ের পর আছিয়ার স্তনে টিউমার ধরা পড়ে। গত ১৭ জুলাই উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. বখতিয়ার আল মামুনের কাছে চিকিৎসা নিতে যান আছিয়া। আছিয়াকে স্তন অপারেশনের জন্য আগৈলঝাড়ার প্রাইভেট হাসপাতাল ‘দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালে’ ডা. হিরন্ময় হালদারের কাছে মৌখিকভাবে পাঠান ডা. বখতিয়ার।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ডা. বখতিয়ার আল মামুন জেলার কোনো হাসপাতালে না পাঠিয়ে কেন তাদের প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠালেন, তা তাদের বোধগম্য নয়।
১৭ জুলাই ডা. হিরন্ময় হালদার হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকায় হাসপাতালের আনারী হাতুড়ে চিকিৎসক মো. আশরাফুল ইসলাম রোগী আছিয়া বেগমের বড়বোন রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে অপারেশনের জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করেন। পরে আড়াই হাজার টাকায় অপারেশন করার চুক্তি হয়।
রোগী আছিয়া বেগমের ভাষ্যমতে, টাকা পেয়ে তাকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নেয় আনারী চিকিৎসক আশরাফুল ইসলাম। এ সময় তাকে অচেতন করে অপারেশন করার দাবি জানায় রাবেয়া বেগম।
কিন্তু ওই চিকিৎসক আছিয়াকে ওটিতে অচেতন না করে নার্স ও হাসপাতালের আয়া দিয়ে হাত-পা চেপে ধরে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেন। এরপর অপারেশন শেষ করেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে।
অপারেশনের পর আছিয়া পর্যায়ক্রমে আরও অসুস্থ হয়ে পরলে গত ২২ জুলাই রাতে তাকে কোটালীপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। সেখানের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রোগীর ভুল অপারেশন হয়েছে বলে স্বজনদের জানান।
গৃহবধূ আছিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আগৈলঝাড়া সাংবাদিকদের কাছে স্বজনদের নিয়ে হাজির হয়ে তার দুর্দশার কাহিনী বর্ণনা করেন। পুনরায় আছিয়া আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ বিষয়ে দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আশরাফুল ইসলাম শাওন সাংবাদিকদের জানান, মেজর কোনো অপারেশন নয় বলে তিনি আছিয়ার অপারেশন করেছিলেন। তাকে অচেন করেই অপারেশন করা হয়েছিল, অপারেশনে কোনো সমস্যা হয়নি।
দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালের পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদার বলেন, ‘আছিয়ার অপারেশনের বিষয়টি বেআইনি ও অমানবিক। আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে এই ঘটনা সমর্থন করতে পারি না।’
রেজিস্ট্রার চিকিৎসক না হয়েও অপারেশন করার বিষয়ে উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো.আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’