ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার ভাটেরচর ব্রিজ এলাকায় গত শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে যানজটের কবলে পড়ে হানিফ পরিবহনের ভলভো বাসটি।
যানজটে গাড়ি থমকে আছে দেখে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাস থেকে নামার আগমুহূর্তে চালক গাড়ি চালান।
এতে বাসের ধাক্কায় মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়ে মহাসড়কে পড়েই জ্ঞান হারান পায়েল। এ সময় সুপারভাইজার মো. জনি তাকে ওঠাতে বললেও চালক জালাল ও হেলপার ফয়সাল মনে করে যাত্রী পায়েল মারা গেছেন।
এতে দায় এড়াতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বাসে থাকা অন্য যাত্রীদের কোন কিছু বুঝতে না দিয়ে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় নিঁখুতভাবে ঘটনাস্থল ভাটেরচর ব্রিজের নিচে ফুলদী নদীতে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।
বুধবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-৩ এর বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিমউদ্দিনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাসের সুপারভাইজার মো. জনি এ তথ্য দেন।
জনির স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে তিনদিনের মাথায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হলো।
গজারিয়া থানার ওসি হারুন অর রশীদ জানান, মঙ্গলবার রাতে হানিফ পরিবহনের গাড়ির চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারকে গজারিয়া থানায় আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সুপারভাইজার জনি ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, মাথা ফেটে রক্তাক্ত জখম হয়ে পড়ে গেলে তিনি (সুপারভাইজার) ছেলেটিকে বাসে ওঠাতে বলেছিলেন চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু ছেলেটি মারা গেছেন মনে করে বাসে ঘুমিয়ে থাকা অন্য যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভাটেরচর ব্রিজের নিচে তাকে পানিতে ফেলে দেয় চালক জালাল ও হেলপার ফয়সাল।
মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পরিদর্শক হেদায়েতুল ইসলাম ভুইয়া জানান, গ্রেফতার তিন আসামির মধ্যে বাসের সুপারভাইজার জনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তিনজনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে হানিফ পরিবহনের বাসে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাইদুর এবং তাঁর রুমমেট ও বন্ধু আকিমুর রহমান আদর।
ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর ক্যাসেল হোটেলের সামনে যানজটে পড়ে। তখন সাইদুর তাঁর মোবাইল বাসেই রেখে প্রস্রাব করতে নামেন। ওই সময় সাইদুরের সহপাঠী ঘুমিয়ে ছিলেন।
সাইদুরের মা কোহিনূর বেগম সকালে তার মোবাইলে ফোন দেন। ফোন ধরেন বাসে থাকা তাঁর বন্ধু আদর। সাইদুর নিখোঁজের বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরা বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এরপর ২৩ জুলাই সোমবার সকালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবের চর খাল থেকে সাইদুরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর হানিফ পরিবহনের তিনজনকে পুলিশ আটক করে।