ঢাকায় মাত্র দুই টাকায় পাওয়া যাচ্ছে মিনারেল ওয়াটার!

ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন চম্পা বেগম। দোতলায় বিল্ডিং থেকে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙ্গে গেছে তার স্বামীর।

অনেক যুদ্ধ করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি ও সিট জোগাড় করতে পারলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে খাবারের পানি নিয়ে। প্রতিদিন প্রায় আট লিটার খাওয়ার পানি লাগে এ দম্পতির। এতে দিনপ্রতি তাদের খরচ হয় প্রায় ১২০ টাকা।

হাসপাতালে ভর্তির দুই দিন পরই পাশের সিটের রোগীর স্বজনের মাধ্যমে জানতে পারেন হাসপাতাল চত্বরে ‘ইম্পেয়ার স্পিং’ দুই টাকা লিটারে পানি বিক্রি করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

এরপর থেকে সেখান থেকেই প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছেন চম্পা বেগম। চম্পার মত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক রোগীই হাসপাতাল সংলগ্ন ‘ইম্পেয়ার স্পিংয়ের ভেন্ডিং মেশিন থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছেন।

চম্পা একটি অনলাইন পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘হাসপাতালে খাওয়ার পানি নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম। প্রতিদিন ১২০ টাকার পানি কিনে খাওয়া সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। এখন ১৬ টাকার পানি কিনলেই আমাদের সারা দিনের খাওয়ার পানির ব্যবস্থা সুন্দরভাবেই হয়ে যাচ্ছে’।

সেকান্দার আলী নামে আরেক রোগীর স্বজন বলেন, ‘৩০ টাকার পানি মাত্র চার টাকায় পাচ্ছি। এতে আমাদের অনেক টাকাই বেচে যাচ্ছে।’ এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পানির কোম্পানি ‘ইম্পেয়ার স্পিং’ কেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ‘ইম্পেয়ার স্পিং’য়ের বিশুদ্ধ পানির ভেন্ডিং মেশিনের অপারেটর মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, একটি মেশিনে একসঙ্গে ২৮০ লিটার পানি মজুদ থাকে।

দুই টাকার কয়েন মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে দিলেই পানি বের হয়। কোম্পানি থেকে তাকে দুই টাকার এক হাজার কয়েন দেয়া আছে। সেগুলোই তিনি মেশিনে দেন এবং কোম্পানি সেই অনুযায়ীই হিসেব নেয়।

প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকার পানি বিক্রি হয় বলেও জানান কাইয়ুম। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেশিনটি খোলা রাখা হয়। অন্যদিকে দুই দিন পর পর মেশিনের ফিল্টার পরিবর্তন করা হয় বলেও তিনি জানান।

আব্দুল কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কথা হয় আরেক রোগীর স্বজন হারুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি চাঁদপুর কচুয়া থেকে এসেছেন তার শাশুড়িকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল এরিয়া হওয়ায় এখান থেকে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা পাই আমরা।

এছাড়া বাহিরে জারের পানি বেশির ভাগই দূষিত বলে বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে দেখতে পাই। অন্যদিকে, একেক কোম্পানির বোতলের পানিরও একেক স্বাদ। তবে দুই টাকা লিটারের এ পানির স্বাদ একদম ঠিক আছে’।

এ ব্যাপারে কথা হয় ইম্পেয়ার স্প্রিং কোম্পানির মার্কেটিং হেড সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (পিজি), সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিডফোর্ট, পঙ্গু ও ঢাকা মেডিকেলসহ কয়েকটি হাসপাতালেই এ সেবা দিচ্ছেন তারা। অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনদের কথা চিন্তা করেই এ সেবা তারা দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

পানির দাম প্রতি লিটার দুই টাকা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র আমাদের খরচ ওঠানোর জন্যই এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কারো কাছে টাকা না থাকলে বা বিশেষ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আমরা বিনামূল্যেও পানি দিয়ে থাকি।’

সাইফুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে হাসপাতালগুলোতে পানির ফিল্টার বসানোর আবেদন করা হয়। এরপর হাসপাতালগুলো অনুমতি দিলে তবেই তারা সেখানে ফিল্টার স্থাপন করা হয়। এ জন্য তারা হাসপাতালের যতটুকু পানি ও বিদ্যুৎ খরচ করেন তার বিলও পরিশোধ করেন।

আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম বলেন, সারা দেশের হাসপাতাল ও শপিংমলসহ পাবলিক প্লেসে আমরা আমাদের এই মেশিন স্থাপন করতে চাই। যাতে করে সাধারণ মানুষ কম খরচে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেন।

শেয়ার করুন: