অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে রাশিয়া এসে মহাবিপদে বাংলাদেশিরা

চলমান ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে বাংলাদেশি, রাশিয়ান ও ইউরোপীয় দালালরা একজোট হয়ে গড়ে তুলেছে মানবপাচারের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।
আর দালালদের লোভনীয় ফাঁদে পা দিয়ে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশিরা রাশিয়ায় এসে এখন পড়েছেন মহাবিপদে।

অবৈধ পথে ইউরোপ পাড়ি জমাতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি রাশিয়ায় পৌঁছান বলে জানা যায়। বেলারুশ ও ইউক্রেন সীমান্তে বাংলাদেশিদের আটক হওয়ার খবর প্রচার করছে ওই দেশের গণমাধ্যম।

দালালদের সহযোগিতা নিয়ে রাশিয়ায় এসেছেন এমন কয়েকজন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবার। এ বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথায় অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার বিপজ্জনক চিত্র উঠে আসে।

রাশিয়ায় চলমান ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের দালাল চক্র। ইউরোপে প্রবেশদ্বার হিসেবে রাশিয়াকে ঘাঁটি হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা। মিথ্যা আশ্বাস আর ভুল তথ্য দিয়ে বাংলাদেশিদের রাশিয়ায় পাচার করছে সংঘবদ্ধ চক্রগুলো।

ঢাকায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যারা রাশিয়ায় যাচ্ছেন, তাদের নাম-পরিচয় রাখা হচ্ছে। যারা ফিরছেন, তাদের হিসাবও রাখা হচ্ছে।

ফিফার ফ্যান আইডি নিয়ে কতজন গেছেন বা ফিরেছেন, সেই হিসাব জানাতে না পারলেও ওই কর্মকর্তা বলছেন, বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে সবাইকে ফিরতেই হবে। তখন জানা যাবে কেউ রাশিয়া বা অন্য কোথায় চলে গেছেন কি না।

মৌলভীবাজারের বাসিন্দা মিয়া শাহাজাহান। স্থানীয় একটি বাজারে তার মুদির দোকান ছিল। বিশ্বকাপের ম্যাচের এবং বিমানের টিকিটসহ সব মিলিয়ে রাশিয়ায় আসতে তার খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। অনেকেই আবার আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকাও খরচ করে রাশিয়ায় আসেন।

এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করা শাহজাহানকে ম্যাচের টিকিট কিনে দিতে ইংল্যান্ড থেকে সহযোগিতা করেছেন তার এক আত্মীয়। ওই আত্মীয় ক্রেডিট কার্ড দিয়ে শাহজাহানের জন্য টিকিট কেনা ও ফ্যান আইডির জন্য আবেদন করেন।

এক থেকে দেড় মাস পরে শাহজাহানের ফ্যান আইডি পৌঁছে যায় ঢাকার গুলশানের ভিএফএস গ্লোবালের অফিসে। ওই ফ্যান আইডি আর ম্যাচের টিকিট হাতে নিয়েই মস্কোগামী ফ্লাইট ধরেন শাহজাহান।

শাহজাহান জানালেন, সিলেটের বিভিন্ন এলাকার বাংলাদেশিরা গত ৭ জুন থেকে রাশিয়ায় আসতে শুরু করেন এবং তারা সবাই ইউরোপে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই মস্কো ঢুকেছেন। তাদের অনেককেই বিশ্বকাপের ম্যাচের টিকিট ও ফ্যান আইডি কিনতে সাহায্য করেছেন ইংল্যান্ডে থাকা আত্মীয়-স্বজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেটের কানাইঘাটের বাসিন্দা জানান, তার পরিচিত চারজন বাংলাদেশি দালালের মাধ্যমে ফ্যান আইডি দিয়ে রাশিয়ায় গেছেন। আরও বেশ কয়েকজন রাশিয়ায় আসার অপেক্ষা রয়েছে।

তাদের সবার বাড়ি সিলেটে। রাশিয়ায় পৌঁছাতে দালালকে দিতে হয়েছে জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা আর ইউরোপে পৌঁছে দিতে পারলে আরও সাত লাখ টাকা দিতে হবে দালালকে।

জানা যায়, তাদের সবাইকে প্রথমে রাশিয়ায় এনে মস্কোর একটি হোটেলে রাখা হয়। রাশিয়ার সীমান্ত পাড়ি দিতে তাঁদের এখন আনা হয়েছে কালিনিনগ্রাদে। সময়-সুযোগ পেলেই নাকি গাড়ি দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে তাদের তুলে দেয়া হবে ইউরোপের দালাল চক্রের হাতে।

এদিকে ৩ জুলাই কালিনিনগ্রাদে তিনজন বাংলাদেশির আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায়। মস্কোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, কালিনিনগ্রাদের ডিপোর্ট সেন্টার থেকে বাংলাদেশিদের আটক হওয়ার একটি নথি দূতাবাসে পোঁছায় গত মঙ্গলবার।

ওই তিনজনকে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দূতাবাসকে আউটপাস (টিপি) ইস্যু করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে রাজধানী মস্কোসহ প্রতিটি ভেন্যু শহরে সাঁড়াশি অভিযান চালায় রাশিয়ার পুলিশ। এ সময় অনেক অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়। জানা যায়, স্টুডেন্ট ভিসায় মস্কো এসে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই কাজ করছেন এমন সাত বাংলাদেশিকে রাশিয়া ত্যাগ করার আদেশ দিয়েছেন এখানকার আদালত।

শেয়ার করুন: