‘হলের সীট ভাড়া ১৫ টাকা আর খাবার ৩৮ টাকার বয়ান আসছে বাজারে নাকি শুনলাম। হলের থাকা-খাওয়া নিয়ে এখন লেখা শুরু করলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। ২০১২ তে হলে থাকা শুরু করি যখন পাতলা ডাইল ফ্রি আছিল, বাইর হওয়ার সময় ৫ টাকা। ১৬ টাকার মুরগী ২২ এ গিয়া ঠেকছিল, একপিস গরুর মাংস যদিও বা কোনোদিন মেন্যুতে থাকত ৩০ টাকা হইত দাম। মাছ আর সবজির কথা বাদ দেই।’
ঢাবি,,‘টাকা পয়সা বাড়া নিয়া আমার মাথাব্যথা ছিলোনা, বাপের কাছে না চাইতেই পাইছি। কিন্তু অনেকের ছিলো। ক্যান্টিনে ভালো একটা ক্যাটারিং আসলো, তাদের খাবারের দাম বেশি ছিলো কিছুটা, তাই অনেক মেয়েই ডাইনিং এর ওই বাজে রান্নাই খাইত। অনেক মেয়ে তো খাইতোই না, নিজেরা রুমে রান্না করত। যে পরিবেশে রান্না হইত সেগুলোয় বিস্তারিত না যাই, তরকারি-মাছ কুটাবাছার জায়গা চোখের সামনেই ছিলো, একদিন তাকায়ে আর কোনোদিন তাকাই নাই, পাছে ভাত উগলায় আসে পেট থেকে।’
‘এক রুমে ৮ জন ছিলাম, ১ টা পড়ার টেবিল, ৩ হাত (আসলে ২.৫ ফুট) চওড়া খাট ২ জন করে শেয়ার করছি। আমার না হয় রুমমেটরা অনেক জোস ছিলো, তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই, কিন্তু অধিকাংশের সেইটা হয় না !
একবার ভূমিকম্পেই ফাটল ধরে গেছিলো বিল্ডিং এ, কোনো সংস্কার ছাড়াই আছে এখনও সেখানে মেয়েরা! ছেলেরা তো রুমই পায় না ! পাইলেও লীগের নেতাদের পা না চাটলে থাকা মুশকিল ! ১৫ টাকা সীট ভাড়া কই থেকে আসলো ? সাথের আনুষাঙ্গিক এর কথা কে হিসাব করবে ? সীট ভাড়া ৩৬০ টাকা, আনুষাঙ্গিক মিলায়ে ভর্তি হইতে আরো ৪/৫ হাজার বের হয়ে যায়।’
‘ডিপার্টমেন্টের আলাদা ফি এর কথাও বাদই রাখি, আমার এম.এস. এ ভর্তি হইতে ১১০০০/- টাকা লাগছে। একজন দিন-মজুর কিংবা রঙমিস্ত্রীর ছেলের এই খরচ দিয়ে পড়ালেখা চালাতে কত কষ্ট হয় সেইটা আপনারা ঐ গদিতে বসে কোনোদিন বুঝবেন না ! আপনারা গাড়ি বহর নিয়ে যাবেন শুনে খুলনায় খালিশপুরে গোটা একটা রাস্তা বড়, ঝকঝকে করে, মসৃণ করে ফেললো !’
‘আপনারা কি বুঝবেন বৃষ্টির ময়লা পানি গাড়ির চাকা শরীরে ছিটায় দিয়ে যাওয়ার মর্ম ! এই ছেলেটাই তো চাইবে একটা ভালো চাকরি করে বাবা মায়ের কষ্ট ঘোচাতে ! সেটার পথও বন্ধ করে রাখতে চান আপনারা, তো এই ছেলে মেয়েরা লাফালাফি করবে না তো কারা করবে? আপনাদের বিদেশে সেটেল ছেলে মেয়েরা ? আপনারা অদ্ভুত, অমানবিক ! আপনারা ক্ষমতায় মত্ত হয়ে কি নির্লিপ্তভাবে হাড় পাঁজর ভেঙে দিচ্ছেন দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের! আজীবন বাঁচবেন আপনারা ? শেষ তো দেখতে হবেই তাই না ?
গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুনিয়া হুমায়রা মুমু বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় নিজের ফেসবুক ওয়ালে এসব কথা বলেন ঢাবির এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কথায় কথায় তারা বলে ক্লাস করবে না। ক্লাসে তালা দেয়, ক্ষতিগ্রস্ত কারা হবে? আমরা সেশনজট দূর করেছি। এদের কারণে এখন আবারও সেই সেশনজট। ১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকা খাবার, কোথায় আছে পৃথিবীর। আজ নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮টাকায় খাবার খেয়ে তারা লাফালাফি করে। তাহলে সিটভাড়া আর খাবারে বাজারদর যা রয়েছে, তাদের তা দিতে হবে। সেটা তারা দিক।