বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের সময় ফুটবলের রাজপু্ত্র লিওলেন মেসি একটা পেনাল্টি মিস করায় ম্যাচ দেখতে দেখতে প্রায় অনেক ফুটবল বোদ্ধাই বলে বসেন, ‘আরে কি রে বাবা, এই পেনাল্টি কেউ মিস করে! মেসি কি করলে মিস করল…ধূর!’ অনুরাগীদের মনের জ্বালা মেটার আগেই সর্বত্র সমালোচনা শুরু। সোশ্যাল মিডিয়ার বাকযুদ্ধও বেঁধে যায়।
যেন… সমালোচনার খোঁচা দিয়ে মেসিকে রাজসিংহাসন থেকে ফেলতে পারলে, তবেই ক্ষান্ত হওয়া যাবে। তবে, পর্তুগাল বিদায় নেওয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয় ফুটবলারের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইটা দীর্ঘায়ু করতে পারেননি রোনালদোপ্রেমীরা।
এই যে পেনাল্টি, পেনাল্টি করে যত চিৎকার, চেঁচামেঁচি, আবেগ, ভালোবাসা, অনুরোগা, সমালোচনা, বোদ্ধাসুলভ আচরণ – তার জন্ম হয়েছিল এক অপেশাদার ফুটবলারের হাত ধরে। বলতে পারবেন, তিনি কে বা কোন দেশের? জানা আছে ইতিহাসটা?
জানা না থাকলে, আজ তাহলে জেনে নিন। সেই জন্যই তো এই গল্পটা বলতে বসা।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি আর্মাঘের গোলকিপার ছিলেন উইলিয়াম ম্যাকক্রাম। এই ভদ্রলোকই যত ঝামেলার জনক। বিপক্ষ দলের ফুটবলাররা মাঠে খেলতে নেমে অভদ্রলোকচিত আচরণ করলে, তাঁদের তুলনায় নরম সাজা দেওয়ার জন্যই এই নিয়মের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।
পৃথিবীর ফুটবল ইতিহাসের প্রথম পেনাল্টি কিক যেখানে নেওয়া হয়েছিল, ঠিক সেই জায়াগায় মিলফোর্ডের ভিলেজ গ্রিনে উইলিয়াম ম্যাকক্রামের আবক্ষ মূতিটি বসানো রয়েছে শ্রদ্ধা জানাতে। সেটা ১৮৯০ সালের কথা। উইলিয়াম জন্মেছিলেন ১৮৬৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। আর ইহলোক ত্যাগ করেন ২১ ডিসেম্বর, ১৯৩২ সালে।
তাহলে বুঝলেন তো, পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়মে বাঁধার রীতিটা শতাব্দী প্রাচীন। সেই সময় আইরিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে ম্যাকক্রাম প্রস্তাব দেন ফুটবলাররা যাতে জোর করে গোল করতে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বিপক্ষ দলের ফুটবলারদের ফাউল না করেন সে জন্য পেনাল্টি ব্যবস্থা চালু করা হোক।
আর সেই প্রস্তাবটা আইরিশ ফুটবল সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের কাছে রাখে। প্রথমে প্রথমে প্রায় রে রে করে তেড়ে ওঠার পর মানুষেরা মত বদলায় পেনাল্টি বিষয়ে। ১৮৯১ সালের কথা।
১৪ ফেব্রুয়ারি স্টোক সিটি আর নটস কাউন্টির মধ্যে এফএ কাপের কোয়ার্টারফাইনাল ম্যাচে গোললাইনে হ্যান্ডবল হওয়ার পর একটা ফ্রি কিক দেওয়া হয় বিপক্ষ টিমকে। তবে, ওতে গোল হয়নি। বারে লেগে ছিটকে যায়। তখন গোঁড়া ফুটবল নিয়মে বিশ্বাসীরা বলতে শুরু করেন, ঠিক আছে পেনাল্টি নিয়ম চালু হলো মন্দ হয় না।
কারণ, সবসময় গোল যে হবে, এমনটাও তো নয়। যাইহোক, ১৮৯১ সালের ২ জুন অবশেষে এই নিয়ম ফুটবলে চালু হয় এবং গোলকিপার ও মাঠে অনবরত বল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ফুটবলার – দু’জনের জন্য সমান সুযোগ এনে দেয় এই নিয়ম।
ম্যাকক্রাম বংশধর: উইলিয়াম নিজে না থাকলেও, তার বংশধর এখনো আছেন। আর এই ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ে আয়ারল্যান্ডে বসে উইলিয়ামের নাতির ছেলে রবার্ট মার্ক্রাম, তার প্রতিপিতামহর কথা বলতে গিয়ে একটা ইচ্ছের কথাও জানিয়ে বসেন।
‘পেনাল্টি কিকটা আমাদের পারিবারিক। আমি তো বলব, পৃথিবীর যেখানেই খেলা হোক না কেন, কোনও পেনাল্টি হলে, আমাদের প্রত্যেকটার জন্য রয়াল্টি পাওয়া উচিত।’