খুনের পর বান্ধবীকে মেজরের ফোন ‘ফিনিশ করে দিয়েছি’!

বান্ধবীকে মেজরের ফোন- সহকর্মীর স্ত্রীকে খুন করার দায়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন মেজর নিখিল হান্ডা। তার ফোনকল রেকর্ড ও জিজ্ঞাসাবাদের পরই বেরিয়ে আসে খুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য। শৈলজা নামে ওই গৃহবধূকে খুনের পর মেজর নিজের বান্ধবীকে নিজেই ফোন করে জানিয়েছিলেন ‘শৈলজাকে ফিনিশ করে দিয়েছি।’

এর আগে দিল্লিরক্যান্টনমেন্ট মেট্রো স্টেশনের কাছে রাস্তার ধারে শনিবার দুপুরে মেজর অমিত দ্বিবেদীর স্ত্রী শৈলজা দ্বিবেদীর (৩০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, শৈলজাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে ঠোঁট টুকরো টুকরো করে খুন করা হয়েছে। খুন করার পর একাধিকবার তাকে গাড়ি দিয়ে পিষে দেয়া হয়। খবর: আনন্দবাজারের।

রোববার উত্তরপ্রদেশের মেরঠ থেকে ওই খুনের ঘটনায় জড়িত মেজর নিখিল হান্ডাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরই দিল্লির এই হাইপ্রোফাইল খুনের ঘটনায় একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসছে।

গ্রেফতারকৃত মেজরকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আরও অনেক তথ্যই মিলবে বলে মনে করছেন দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

এদিকে গ্রেফতারকৃত মেজর হান্ডার কল রেকর্ডের তথ্য ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনের পরই দিল্লির একটি নম্বরে ফোন করেন মেজর নিখিল হান্ডা। সেই সূত্রে দিল্লির প্যাটেল নগরের বাসিন্দা এক নারীর নামও উঠে এসেছে।

এ নিয়ে গ্রেফতারকৃত মেজর হান্ডাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই নারী মেজর হান্ডার দীর্ঘদিনের বান্ধবী। খুনের পর ফোন করে তাকেই মেজর হান্ডা জানান, ‘শৈলজাকে ফিনিশ করে দিয়েছি।’

তবে খুন বা পরিকল্পনার সঙ্গে ওই নারীও কোনোভাবে যুক্ত কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, খুনের পর নিজের গাড়ি থেকে রক্তের দাগ ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করেন গ্রেফতারকৃত মেজর নিখিল। এরপর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সেনাবাহিনীর বেস হাসপাতালে যান। সেখানেই তার স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের তিনি জানান, ক্যান্টনমেন্টের কাছেই রিজ এলাকায় তার গাড়ির সঙ্গে একটি পশুর ধাক্কা লেগেছে।

সেখান থেকে বাড়ি ফিরে বাবাকেও একইভাবে পথ দুর্ঘটনার কথা বলেন মেজর নিখিল হান্ডা। এরপর দিল্লির সি আর পার্কের এক কাকার বাড়িতে যান। সেখান থেকে এক আইনজীবীর অফিসেও যান।

রাত ১০টা নাগাদ তার এক তুতো ভাই দিল্লির আশ্রম এলাকায় পৌঁছে দেন। ওই ভাইয়ের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধারও নেন তিনি। এরপর রাতেই চলে যান উত্তরপ্রদেশের মেরঠে। আর সেখান থেকেই পরের দিন রোববার সকালে গ্রেফতার হন নিখিল হান্ডা।

আশ্রম থেকে মেরঠ যাওয়ার রাস্তায় সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়া মেজর হান্ডার ছবিও পেয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে টোলের রসিদও। তবে এখনও খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং রক্ত মোছার কাজে ব্যবহার করা টাওয়েলের হদিস মেলেনি। মেজর হান্ডাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেগুলোর সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

গ্রেফতারের পর মেজর হান্ডার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল থেকেও প্রচুর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নিখিলের সঙ্গে যে নিহত মেজরপত্মী শৈলজার প্রতিদিন একাধিকবার ফোন, চ্যাট ও ভিডিও কলে কথা হতো, সেই তথ্য মিলেছে।

গত তিন মাসেই অন্তত তিন হাজার বার দুজনের ভয়েস ও ভিডিও চ্যাটের প্রমাণ মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকেই উদ্ধার হয় শৈলজার মোবাইল ফোন। কিন্তু এখনও সেটির সিমের তথ্য উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে খুন হওয়া শৈলজার স্বামী মেজর অমিত দ্বিবেদীর দেয়া তথ্য তদন্তে পুলিশকে বড় সাহায্য করেছে। কারণ শৈলজার নিখোঁজ হওয়ার পর প্রথমেই সন্দেহ গিয়ে পড়ে সহকর্মী মেজর নিখিল হান্ডার ওপর।

পুলিশকেও মেজর দ্বিবেদী জানান, তার স্ত্রীর নিখোঁজ রহস্যের পেছনে অবশ্যই তার সহকর্মী মেজর হান্ডার হাত রয়েছে। এরপরই পুলিশ নিখিল হান্ডার বাড়িতে যায়। কিন্তু ততক্ষণে সেখান থেকে কেটে পড়েন নিখিল হান্ডা। তবে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে মেজর হান্ডাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

শেয়ার করুন: