বড় ধরনের রেল দুর্ঘটনার হাত থেকে বাবা-মেয়ে মিলে ২০০০ রেলযাত্রী ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন স্বপন নামে এক আদিবাসী। হতদিরদ্র পরিবারের সেই বাবা-মেয়ে ত্রাতা না হয়ে উঠলে, বড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটত, নিশ্চিত ভাবেই। ২০০০ রেলযাত্রী তাদের সৌজন্যেই বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
ভারতের উত্তর ত্রিপুরার ধালাই জেলার আথারামুড়া পাহাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। উত্তর ত্রিপুরার ধানচারা গ্রামে পরিবার নিয়ে থাকেন স্বপন দেববর্মা। আক্ষরিক অর্থেই দারিদ্র্যপীড়িত। পুরো গ্রামে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে লেপ্টে গরীবী, আড়াল করার কোনো উপায় নেই।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঘটনার দিন, ১৫ জুন ধালাই জেলার আথারামুড়া পাহাড় থেকে নেমে আসছিলেন স্বপন। সঙ্গে তার মেয়ে সোমাতি ছিল। সেই সময়েই দূর থেকে কানে আসে ট্রেনের আওয়াজ।
আপনিই চোখ যায় পাহাড়-ঘেঁষে এগিয়ে চলা ট্রেন লাইনে। মহাবিপদের আশঙ্কায় আঁতকে ওঠেন স্বপন। ট্রেন ততক্ষণে আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। কোনো উপায় না দেখে মুহূর্তে ঝাঁপ দেন রেল লাইনে।
সে সময় তার পরনের ময়লামাখা জামাটা খুলে, প্রাণপণ নাড়তে থাকেন। যাতে করে ট্রেন চালকের নজরে আসে সেটি। ততক্ষণে তার মেয়েও এগিয়ে এসেছে বাবার কাছে। অবশেষে ট্রেন চালকের নজরে আসে এই দৃশ্য, বিপদ থেকে সামন্য কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে যায় ট্রেনটিও।
বিপদের হাত থেকে রক্ষা করায় বাবা-মেয়েকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কার্পণ্য করেননি চালক সোনুকুমার মণ্ডলও। চালক সোনুকুমার বলেন, ‘স্বপনবাবুর ওই সিগন্যাল না দেখলে, বিপদ অনিবার্য ছিল। বহু মানুষের নিশ্চিত প্রাণহানি হত।’
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্রমাগত ভারী বর্ষণের জেরে মাটিধসে ট্রেনলাইনের একটা অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। ফলে, ওখান দিয়ে ট্রেন গেলে বিপদ অনিবার্য ছিল।
আদিবাসী পরিবারের এই কর্তার এমন ভূমিকায়, আপ্লুত হয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। বাবা-মেয়েকে যাতে পুরস্কৃত করা যায়, তার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রেলের তরফেও স্বপন দেববর্মাকে পুরস্কৃত করার কথা ভাবা হয়েছে।
স্বপনের অবশ্য পুরস্কারে মাথাব্যথা নেই। তার জন্য যে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে ২০০০ রেলযাত্রীরা রক্ষা পেয়েছেন, তাতেই তৃপ্ত এই মানুষটি।