বিশ্বের সবচেয়ে ছোট – বগুড়ার একটি প্রাচীনতম জনপদ সান্তাহার। এখানকারই একটি গ্রামের নাম তারাপুর। জানা যায়, একসময় এই গ্রামটি রাণী ভবনীর শাসনাধীন ছিল।
এখান থেকেই ধারণা করা হয় তার শাসনাধীন সময়কালে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সেই হিসেবে এই মসজিদের বয়স প্রায় ৩০০ বছর। আর এই মসজিদটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বা ক্ষুদ্রতম মসজিদ। এখানে তিনজন একসঙ্গে নামাজ পড়া যায়।
পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে তিনজনের নামায পড়া যায় এরকম ক্ষুদ্রতম মসজিদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়নি। এ কারণে ধারণা করা হয় এটিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মসজিদ।
মসজিদটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এখানে আর কেউ নামাজ পড়ে না। এখন মসজিদটি শুধুমাত্র কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেরই ধারণা সেসময় এখানে মুসলমানের সংখ্যা কম ছিল বিধায় এই ছোট মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এই মসজিদ নির্মাণ নিয়ে কয়েকটি মত প্রচলিত রয়েছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
১. ততকালীন সময়ে ওই এলাকায় মাত্র ৩ জন মুসলমান বা মুসল্লি ছিল বিধায় তারা তিনজনের জন্য এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
২. সান্তাহার এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত ছিল বিধায়। মুসলমানরা সেসময় কোণঠাসা ছিল। তাই কেবলমাত্র আযান দিয়ে ছোট্ট একটা জামাত করার জন্য এই তিনজনের মসজিদ বানানো হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
কেননা, তিনজন মিলেই জামাতে নামায পড়তে হয়। অনেক আলেম মনে করেন তিনজনের কমে জামাতে নামাজ পড়া যায় না এমন ধারণা থেকে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
৩. কোনো এক ভিনদেশী ইসলাম প্রচারক এই গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছুদিন এখানে যাত্রা বিরতি করেন মূলত তিনিই এই মসজিদ নির্মাণ করেন। যদিও ইতিহাস কিংবা শিলালিপিতে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
৪. ওই সময়ে একজন মুসলমান নারী এই গ্রামে বাস করতেন। যিনি ছিলেন পরহেজগার। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে ওই নারীর নামাজ পড়ার অনেক অসুবিধা হতো।
রাণী ভবানী এ কথা জানতে পেরে তিনি নিজেই এই গ্রামে এসে সেই নারীকে যেন কেউ তার নামাজ পড়াতে অসুবিধা করতে না পারে, সে জন্য তার পেয়াদারদের হুকুম দেন তার জন্য রাজকীয় নকশায় একটি মসজিদ তৈরি করে দেয়ার।
৫. এটাও শোনা যায়, কোনো এক কারণে নাকি গ্রামবাসীরা তার পরিবারকে একঘরে করে দিয়েছিল। এ কারণে পরিবারটি পরে নিজেদের নামায পড়ার জন্য বাধ্য হয়ে এই ছোট মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
৬. এলাকাটি হিন্দু জমিদারদের দখলে ছিল। তবে কয়েকজন মুসলমান পেয়াদা কাজ করতেন এখানে। তারা হয়তো রাজকর্মচারী অথবা কারিগর। ধারণা করা হয় যেহেতু গ্রামে হিন্দুদের মন্দির আছে। কিন্তু কয়েকঘর মুসলমান থাকলেও তাদের প্রার্থনালয় নেই। তাই পেয়াদা কিংবা স্থাপত্য কারিগররা মসজিদটি নির্মাণ করেন।
এই মসজিদটির উচ্চতা ১৫ ফুট আর প্রস্থ ৮ ফুট, দৈর্ঘ্য ৮ ফুট, এটা বাইরের দিকে। ভিতরের দিকে আরো কম। এই মসজিদে একটি গম্বুজ রয়েছে। কোনো জানালা নেই। দরজার উচ্চতা ৪ ফুট, চওড়ায় দেড় ফুট।
ইটের তৈরি দেয়ালের পুরুত্ব দেড় ফুট। ইটগুলোর প্রতিটি অর্ধেকই ভাঙা। মসজিদের দরজায় দুটি রাজকীয় আদলের খিলান আছে। মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন সংবলিত মিনার, খিলান ও মেহরাবই এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
যত্নের অভাবে মসজিদটির ওপরে ও চারপাশে গাছপালায় ভরে গেছে। বৃষ্টির সময় বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে মসজিদটির ভিতরে। এ কারণে দিনে দিনে ধ্বংসের দিকে ঐতিহ্যে ঘেরা মসজিদটি। গাছপালার ভিতরে পোকা-মাকড় থাকতে দেখা যায়।
এটিই যদি বিশ্বের সবথেকে ছোট মসজিদ হয়ে থাকে। তাহলে এই মসজিদটিকে শীঘ্রই বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করা উচিত। এবং বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উচিত এটি সংরক্ষণে এগিয়ে আসা। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি এমনটাই।
প্রসঙ্গত, ততকালীন অর্থাৎ ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ শেষ ভাগে ভারত উপমহাদেশে যে কয়েকটি শহর দ্রুত আধুনিক হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো- সান্তাহার। বর্তমানে এটা সান্তাহার নামে পরিচিত হলেও এর পূর্ব নাম সুলতানপুর। তখন এটি রাজশাহী জেলার অন্তর্গত ছিল। এই সান্তাহার থেকে ৩ কিলোমিটার ভেতরে তারাপুর গ্রাম অবস্থান। প্রায় দেড়শ’ বছরেরও অধিক সময় ধরে এই মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ রয়েছে।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভূপালে যে মসজিদটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মসজিদ বলে দাবি করা হয়। এই মসজিদটিকে অনেকে ভারতের বা এশিয়ার এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মসজিদ বলে থাকেন।
বগুড়ার সান্তাহারে অবস্থিত নাম বিহীন এই মসজিদটি তার চেয়ে ছোট। বাংলাদেশ সরকার চাইলে এই মসজিদটিকে গ্রীনিচ বুক অফ রেকডে নিয়ে আসতে পারে। এবং সংস্কার করে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারে। তথ্য ও ছবি: ইন্টারনেট