ঠিক কি অভিযোগ ‘এমপিপুত্র’ শাবাব চৌধুরীর বিরুদ্ধে?

রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়িচাপা দিয়ে সেলিম ব্যাপারী (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনার পর ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও অভিযুক্ত শাবাব চৌধুরীকে গ্রেফতার ও ঘাতক গাড়িটি জব্দে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ বলছে ঘটনায় মামলা হয়েছে ও তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ জুন) সকালে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মোহাম্মদ শামিম হোসেন।

মঙ্গলবার (১৯ জুন) রাত সাড়ে দশটার দিকে মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপরে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার সেলিম ব্যাপারীকে চাপা দিয়ে দ্রুত বিজয় সরণির দিকে পালিয়ে যায়। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-৭৬৫৫।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্যমতে, গাড়িটির মালিক কামরুন্নাহার শিউলি। তিনি নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর স্ত্রী ও নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান। শাবাব চৌধুরী তাদেরই এক মাত্র ছেলে। এদিকে সেলিমকে চাপা দেয়ার পর গাড়িটি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ন্যাম ফ্ল্যাটে চলে যান শাবাব।

এর পর থেকে গাড়িটি সেখানেই রয়েছে এবং শাবাবও রাজধানীতে অবস্থান করছে। গাড়িটি জব্দ করার বিষয়ে ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামিম হোসেন জানান, তারা ঘাতক গাড়িটি খুঁজছেন। এখনও জব্দ করতে পারেননি।

নিহত সেলিম ব্যাপারীর গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তিনি মহাখালী ডিওএইচএসে এক ব্যক্তির গাড়ি চালাতেন আর পরিবার নিয়ে উত্তরখান এলাকায় থাকতেন। ওই দিন রাতে তিনি মহাখালী ফ্লাইওভারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় এমপিপুত্র শাবাবের বেপরোয়া গাড়ির চাপায় নিহত হন তিনি।

ঘটনার তিন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সেলিমের পায়ের ওপর গাড়ি তুলে দেয়ার পর তিনি বাম্পার ধরে ফেলেন। এর পর গাড়িটির চালক শাবাব ব্যাক গিয়ারে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

গতি বাড়িয়ে তিনি আবারও সামনের দিকে এগিয়ে যান। এতে সেলিম ছিটকে ফ্লাইওভারের গার্ডারে গিয়ে পড়েন। মুহূর্তেই মাথা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় তার। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

এদিকে ওই দুর্ঘটনার পর গাড়িটি যখন দ্রুত এসে সংসদ ভবনের উল্টো দিকের ন্যাম ফ্ল্যাটে ঢোকে তখন সেটিকে অনুসরণ করেন একজন মোটরসাইকেল আরোহী ও আরেকজন প্রাইভেট কার আরোহী।

ভবনটির আনসার ও প্রহরীদের বরাত দিয়ে তারা জানান, ওই তরুণের নাম শাবাব চৌধুরী। তিনি কামরুন্নাহার শিউলি ও সংসদ সদস্য একরাম চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। গাড়িটি তিনিই চালাচ্ছিলেন।

তবে তা অস্বীকার করেন শাবাবের মা কামরুন নাহার শিউলি। তিনি অভিযুক্ত গাড়িটির মালিকানার বিষয়টি স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন চালক নুরুল আলম নামে তাদের গাড়িচালক। উত্তরায় এক বান্ধবীর কাছে একটি পার্সেল পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেটি নিয়ে উত্তরা যাচ্ছিলেন নুরুল আলম।

নুরুল আলম কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই গাড়িচালক এখন কোথায় আমরা তা জানি না। চালক নুরুল আলমকে আমরাও খুঁজছি।

আর শাবাবের বাবা একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, গাড়িটি আমাদেরই। কিন্তু তবে আমার ছেলে দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিল না। আমাদের পাঁচজন গাড়িচালক আছেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন গাড়িটি চালাচ্ছিল। আমি এখন নোয়াখালীতে অবস্থান করছি, তাই বলতে পারছি না গাড়িটি কে চালাচ্ছিল।

এদিকে নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, ঘটনার পর থেকেই এমপির পরিবার থেকে বিষয়টি মীমংসা করতে নিহতের স্বজনদের চাপ দিচ্ছে। নিহতের পরিবারকে এ বিষয় অভিযোগ করতেও নিষেধ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন: