অকপটে ইরফান খান জানিয়ে দিলেন। লন্ডনে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অভিনেতা। হাই-গ্রেড নিউরোএন্ডোক্রিন ক্যানসারই হয়েছে তাঁর। সত্য কেউ চেপে রাখতে পারে না। তা যতই ভয়ানক ও দু:খ দেয়।
সম্প্রতি ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এক দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন ইরফান। সেখানে উঠে এসেছে তাঁর অসুখ আর এই সময়ের অনেক উপলব্ধির কথা। নিজের মনের কথা জানাতে গিয়ে ইরফান বলেন,
‘অনেকদিনই হল আমার হাই-গ্রেড নিউরোএন্ডোক্রিন ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে। এই শব্দটি আমার শব্দভান্ডারের একদম নতুন একটি শব্দ।
রোগটিও এতটাই বিরল যে, এর নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি নেই বলেই জানলাম। কাজেই এক অনিশ্চিত পরিণতির খেলার মধ্য দিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। অথচ ছিলাম অন্য খেলায়।
গতির ট্রেনে সওয়ার ছিলাম। স্বপ্ন ছিল, পরিকল্পনা ছিল, আশা, লক্ষ্য- তাতেই মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ কাঁধে কেউ টোকা মারল। হাতটি টিকিট চেকারের ছিল। জানাল, তোমার স্টেশন এসে গিয়েছে। দয়া করে নেমে যাও।
আমি তো অবাক! না, না আমার গন্তব্য তো আসেনি! কিন্তু সেটাই স্টেশন ছিল। আর এমনটাই কখনও কখনও হয়। দুঃখের সময় আমায় অনুভব করালো, আদতে আমরা সমুদ্রের টেউয়ের তালে ভেসে চলা একটা কর্কের মতো। অথচ আমরা জীবনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি। ’
তিনি আরও লেখেন, ‘ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে আমারও ভয় লেগেছিল। বিপদের সময় নিজের থেকে কেবল একটাই আশা রাখার চেষ্টা করেছিলাম। চেয়েছিলাম পায়ের মাটি শক্ত রাখতে।
ভয় যেন আমায় ছুঁতে না পারে। তারপর যন্ত্রণাকে যখন প্রত্যক্ষ করলাম, কোনও সান্ত্বনা, প্রেরণাই যেন কাজ করছিল না। ঈশ্বরের থেকেও বড় হয়ে উঠেছিল ওই যন্ত্রণা।
কিছু কাজ করছিল না। আমার হাসপাতালের উলটো দিকেই ছিল ক্রিকেটের মক্কা লর্ডস। আমার স্বপ্নের মক্কা। এত কষ্টের মধ্যেও একটা উপলব্ধি হতে শুরু করল।
জীবন ও মৃত্যুর মাঝে কেবল এই একটা রাস্তার পার্থক্য। প্রথমবার বুঝতে পারলাম মুক্তির আনন্দ। যেন জীবনকে সঠিক অর্থে চিনতে পারলাম। হেরে গেলে চলবে না। কিছুতেই চলবে না। লড়তে হবে। হোক জীবন যেখানে শেষ।’