রাশিয়ায় বল গড়ানোর আগে থেকেই মেসিকে নিয়ে প্রত্যাশা বাড়ছিল আর্জেন্টাইন ভক্তদের। আর মাঠে বল গড়াতেই মন ভাঙে ভক্তদের। প্রথম ম্যাচেই পেনাল্টি মিস করলেন ‘এলএম টেন’।
অন্যদিকে বিশ্বকাপের ২১তম আসরের প্রথম ম্যাচটিতেও জয় পায়নি বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার আর্জেন্টিনা। তাই নিন্দুকরা নখ-দাঁত বের করেছেন। অন্যদিকে রক্তাক্ত হচ্ছেনে আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরা।
কিন্তু ভক্তদের মেসিতে যে প্রবল ভরসা। মেসি যে ভরসারই নাম। রুশ মুলুক থেকে আর্জেন্টিনায় এবার বিশ্বকাপ নিয়ে ফিরবেন ‘এলএম টেন’, এই স্বপ্ন নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে আলবিসেলেস্তে ভক্তদের।
খেলার মাঠে তিনি ফুটবলের ঈশ্বর, রাজপুত্র, সেরার সেরা। কিন্তু মানুষ মেসির ব্যাপ্তি বোধহয় আরও বেশি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো তার ঔদ্ধত্য নেই। হাত-পা ছোড়েন না। সব সময়েই তিনি শান্ত। নির্বিকার। রোনালদো বা নেইমারের মতো ‘ক্যাসানোভা’ ভাবমূর্তিও নেই তার।
পোশাক বদলানোর মতো বান্ধবী বদলে খবর হন না। বরং এক নারীতেই তিনি বেজায় খুশি। তাকেই সঁপেছেন মনপ্রাণ। এক ক্লাবের প্রতিই তার দায়বদ্ধতা। তার এই সহজ, সরল মানবিক চেহারা দেখে মহিলা ভক্তরাও ভালবেসে ফেলেছেন মেসিকে। গানের কথায়, ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব, ছেড়ে দেব না।’ মেসিকে কে আর ছাড়তে চায়!
মেসি এমনই এক আবেগের নাম যার জন্য যে কোনও প্রেমিক তার সঙ্গীনীকে পর্যন্ত ত্যাগ করতে পারেন হাসি মুখে। বাস্তবেও মেসির জীবনেও এমনই ঘটেছে।
মাত্র ৯ বছর বয়সে রোজারিওয় আলাপ মেসি ও তার বর্তমান স্ত্রী অ্যান্তোনেল্লা রোকুজ্জোর। তখন অ্যান্তোনেল্লার বয়স ৮। অ্যান্তোনেল্লার এক দূর সম্পর্কের ভাই লুকা স্ক্যাগলিয়ার মাধ্যমেই দু’জনের পরিচয়। রূপকথার জন্মও তখন থেকেই।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ‘৯০ মিন’-এ লুকা জানিয়েছিলেন, সেই সময়েই অ্যান্তোনেল্লাকে চিঠি লিখে মেসি জানিয়েছিলেন ‘একদিন আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা হব।’ তার পর? রবিঠাকুরের কথায়, ‘মাঝে হল ছাড়াছাড়ি।’ মেসি-আন্তোনেলার মধ্যে বেড়ে গেল দূরত্ব।
রোজারিও ছেড়ে মেসিকে চলে যেতে হয় বার্সেলোনায়। শৈশব প্রেমও কি হারিয়ে গেল সেই সঙ্গে? মেসি বার্সেলোনায়। অ্যান্তোনেল্লা রোজারিওয়। কথায় বলে, চোখের থেকে দূরে চলে গেলে সে নাকি হৃদয় থেকেও হারিয়ে যায়। মেসির ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয়নি। মেসির হৃদয়ে যে ছাপ ফেলে গিয়েছিল রোজারিওর এক সুপারমার্কেট মালিকের মেয়ে। অ্যান্তোনেল্লার হৃদয়ের তল কি খুঁজে পেয়েছিলেন মেসি?
মেসি আর্জেন্টিনা ছাড়ার পরে অ্যান্তোনেল্লার জীবনে চলে আসেন অন্য এক পুরুষ। তিন-তিনটে বছর তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অ্যান্তোনেল্লার। মেসি কি সেই সময়ে অ্যান্তোনেল্লার মনে ঝড় তুলতেন না? ‘এলএম ১০’ কি মুছেই গিয়েছিলেন অ্যান্তোনেল্লার হৃদয় থেকে?
‘প্রথম প্রেম’কে কি কেউ কোনোদিনও ভুলতে পেরেছে! ছেলেবেলার প্রেমিকের মনে অ্যান্তোনেল্লা থেকেই গিয়েছিলেন স্বপনচারিণী হিসেবে। বার্সায় সেই কথা কবুলও করেছিলেন মেসি। এর মধ্যেই কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর।
জনশ্রুতি বলে, আন্তোনেলার সেই প্রেমিক পথ দুর্ঘটনায় তারার দেশে হারিয়ে গেছে। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দূরে থাকলেও মেসির কানে পৌঁছয় অ্যান্তোনেল্লা শোকস্তব্ধ বার্তা।
দ্রুত তিনি ফিরে আসেন আর্জেন্টিনায়। অ্যান্তোনেল্লার পাশে সেই সময়ে এসে দাঁড়ান ফুটবলের রাজপুত্র। শৈশবের সেই প্রেম তখন থেকেই পাকাপোক্ত। বর্হিজগত অবশ্য মেসি-অ্যান্তোনেল্লার প্রেমের বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেননি তখন।
প্রাক্তন প্রেমীকের সঙ্গে অ্যান্তোনেল্লা
মেসির সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছিল কয়েকজন মহিলার নামও। তবে সেগুলো ছিল একমুখী। কেউ নিজের প্রচারের জন্য মেসিকে ব্যবহার করেছিলেন। কেউ আবার রাজপুত্রের শরীরে মাখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কলঙ্কের কালি।
রোজারিও-র এক মডেল ম্যাকারেনা লেমোস এক সময়ে দাবি করেছিলেন, মেসির সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের ঠিক আগে মেসি যখন আর্জেন্টিনা ফিরে আসেন, তখনই নাকি আলাপ সেই মডেলের সঙ্গে। এক সংবাদমাধ্যমের কাছে লেমোস জানিয়েছিলেন, আলাপ হলেও তাকে চুম্বন পর্যন্ত করেননি মেসি।
এর মাঝে আর্জেন্টিনার মডেল-সিঙ্গার লুসিয়ানা সালাজারের সঙ্গেও নাম জড়ায় রোজারিওর বিস্ময়বালকের। লুসিয়ানা মেসির থেকে বয়সে ৬ বছরের বড়। শোনা যায়, বেশ কিছুদিন অনলাইন ডেটিং করেছিলেন দু’জনে। কিন্তু কেউই এই সম্পর্ক নিয়ে কোনও দিন মুখ খোলেননি। এই সব সম্পর্কের সত্যতা নিয়েই রয়েছে প্রশ্ন।
মেসির জীবনে স্থায়ী স্তম্ভের মতো থেকে গিয়েছেন কেবলমাত্র অ্যান্তোনেল্লা। কিন্তু কেন? নিন্দুকেরা বলতেন, মেসির স্টারডমের জন্যই অ্যান্তোনেল্লার এমন সিদ্ধান্ত।
শুধুই কি স্টারডম? যে প্রেমিক খ্যাতির আলোয় এসেও, বহু নারীর হার্টথ্রব হয়েও, গ্ল্যামারের হাতছানি উপেক্ষা করে, প্রথম প্রেমিকার স্মৃতি রেখে দেন মনের মধ্যেই, তার জন্য এই সিদ্ধান্ত কি স্বাভাবিক নয়? অ্যান্তোনেল্লা হারাতে চাননি এমন ‘লয়াল’ প্রেমিককে। এই কারণেই তো অনেকে বলেন, ‘তুমি বললে লয়ালটি, আমি শুনলাম লিওনেল মেসি।’
মেসি-অ্যান্তোনেল্লার প্রেম কাহিনি নিয়ে শোনা যায় আরো অনেক কথা। এক সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, অ্যান্তোনেল্লার সেই প্রেমিক হৃদয় ভাঙার দুঃখ সামলে নিয়েছিলেন খুব সহজেই। কারণ তার প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম মেসি। যার অপাপবিদ্ধ মুখ দেখলে নতজানু হয় ষড়রিপু।
সংবাদ মাধ্যমের কাছে আন্তোনেলার সেই প্রেমিক নাকি একবার বলেছিলেন, ‘অ্যান্তোনেল্লা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ও যার জন্য আমাকে ছেড়েছে, সেই মানুষটা লিওনেল মেসি।’
সান্ত্বনা মনে হলেও সেদিন নিজের কলারই বরং উঁচু হয়েছিল সেই প্রেমিকের। একদা মেসির স্ত্রীর সঙ্গে যে তার সম্পর্ক ছিল। কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে, তা বলা মুশকিল। মেসি-অ্যান্তোনেল্লার প্রেম এখন কিংবদন্তিতে পর্যবসিত হয়েছে। খবরের ভিতরের খবর যাই হোক না কেন, শৈশবের প্রেম এখন শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছে।
পেনাল্টি স্পট থেকে গোললাইন— পৃথিবীর রহস্যময় সরণিতে প্রথম ম্যাচেই দিগভ্রষ্ট হয়েছেন মেসি। তাই বলে যে তিনি হারিয়ে গিয়েছেন তা নয়। ‘এলএম ১০’ সব সময়ে নিজের লক্ষ্যে স্থির। ফুটবল হোক বা সম্পর্কে। পেনাল্টি ‘মিস’ করলেও ‘গোট’। অর্থাৎ ‘গ্রেটেস্ট অফ অলটাইম।’ রাশিয়া থেকে বিশ্বকাপ নিয়ে আর্জেন্টিনা ফিরলে মেসি বসে পড়বেন ঈশ্বরের আসনে। ভক্তরা সেটাই চাইছে।