প্রাইভেটকারে ধর্ষণ! রিমান্ড শেষে কারাগারে রনি, ভিডিও বার্তায় ভিন্ন দাবী স্ত্রীর !

ঢাকা- রাজধানীর কলেজগেটে প্রাইভেটকারে তুলে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে জনতার গণধোলাইয়ের পর পুলিশের হাতে আটক মাহমুদুল হক ওরফে রনিকে (৩২) রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস রনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিনহাজ উদ্দিন আসামি রনিকে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে রনির আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন । শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে কারগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ৯ জুন রাতে দুই তরুণী কলেজগেট এলাকায় মাহমুদুল হকের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ২৯-৫৪১৪) থামিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন।

ওই সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন মাহমুদুলের ব্যক্তিগত গাড়িচালক। কিছুদূর যাওয়ার পর এক তরুণীকে শিশুমেলা এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়। গাড়িতে থাকা আরেকজনকে ধর্ষণ করেন মাহমুদুল। একপর্যায়ে ঘটনা টের পেয়ে রাস্তায় থাকা লোকজন গাড়ি থামিয়ে চালক ও মাহমুদুলকে মারধর করে। মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তায় থাকা লোকজন মাহমুদুলের গাড়ি আটক করে। এ সময় চালক ও মাহমুদুলকে মারধর করা হচ্ছিল।

গত ১০ জুন ওই ঘটনায় তরুণী শেরেবাংলা নগর থানায় ধর্ষনের অভিযোগে মামলা করেন।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় পুরো ঘটনাকে সাজানো উল্লেখ করে ‘রনি ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেছেন রনির স্ত্রী। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রনিকে পরিকল্পনার মাধ্যমে ফাঁসানো হয়েছে বলেও দাবী করেন তিনি। আর এর জন্য অভিযোগের তীর ছোড়েন প্রতিবেশীদের দিকে।

ঘটনার নেপথ্যে আসলে কী ? এমন সন্ধানে কয়েকজন ‘উতসুক’ তরুন কথা বলেছেন রনির স্ত্রীর সাথে।

ভিডিওতে রনির স্ত্রী বলেন, ওকে (রনি) ফাঁসানোর জন্য, আমাদের মেরে ফেলার জন্য; পুরো পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য কেউ এই ষড়যন্ত্র করছে। পুরো পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে।

এসময় তিনি দাবি করেন যে, রনি তার মা এর কথামত দেশের বাড়ি থেকে নতুন চাল আনতে যাচ্ছিলেন। এসময় তারও সাথে যাওয়া কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি যাননি। এসময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যে তার স্ত্রীকে নিয়ে বের হতে চাচ্ছিল সে কীভাবে গাড়িতে অন্য নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করবেন?

প্রায় ছয় মিনিটের ঐ ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীকে গাড়ি থেকে বের করে এনে বিবস্ত্র করা হয়। ড্রাইভারের পরনেও লুঙ্গি ছিল। এমনকি যে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয় সেখানে শুরুতে মেয়ে দুইটিকে দেখা যায়নি।

মেয়েগুলোকে পরে আনা হয়েছে। মেয়েগুলো যদি গাড়িতেই থাকতো তাহলে গাড়িতে কেন আগে থেকে ভিডিও করা হল না? গাড়িতে মেয়েগুলো ছিলই না আর আমার স্বামীও উলঙ্গ ছিল না গাড়িতে।

ভিডিওতে রনির স্ত্রী দাবি করেন যে, ঐ দিন বাসা থেকে বের হওয়ার পর বাসার কাছেই কিছু মোটর সাইকেল চালকদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয় রনির। তারা রনিদের প্রতিবেশী বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় দেননি রনির স্ত্রী। তবে ঐ বাইক চালকদের থেকে রনি টাকা পাবেন বলে জানান তিনি। আর সেই টাকার জন্যই পরিকল্পিত এই ‘নাটক’ সাজানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, যদি এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হতো তাহলে সবাই তাকে (রনি) নিয়েই থাকতো। তাকে তো পুলিশে দেওয়া হয়েছে। তাহলে আমাদেরকে নিয়ে (পরিবারের সদস্যদের) কেন কথা বলা হচ্ছে? কেন আমার ছবি ছড়ানো হচ্ছে? এর কারণ আমাদের পরিবারটিকেই ছোট করা হচ্ছে।

একই ভিডিও বার্তায় স্বামীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন রনির স্ত্রী। তিনি বলেন, আমার স্বামী (রনি) মাদক কী তাই জানে না। সে কখনও মাদক বা মদ নেয়নি। আর আমাদের মধ্যে সম্পর্ক বেশ চমৎকার। আমাদের মধ্যে কোন ঝামেলা নাই।

আমাদের এলাকায় এসে দেখতে পারেন। আমাদের ফেসবুক আইডিতে দেখবেন আমাদের ভিতরে কতো মিল মহব্বত! সে যদি ভালো না হতো তাহলে তো তার সঙ্গে নয়-দশ বছর যাবত সংসার করতে পারতাম না। আমার স্বামী আমাকে ছাড়া ঘরে বাইরে কোথাও রাত কাটায় না।

ভিডিও বার্তায় স্বামীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন রনির স্ত্রী। এসময় সর্বসাধারণের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা আমার স্বামীকে গালি দেওয়ার আগে একটু চিন্তা করে দেখেন যে, আপনারা কী করতেছেন এগুলি? পরে যদি প্রমাণিত হয় যে উনি (রনি) সৎ এবং নির্দোষ ছিল তাহলে কী আপনারা তার সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারবেন? সে কী আর কখনও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে?

আপনারা রনি’র সাথে সাথে আমাদেরকেও হেয় করতেছেন। আমাদের বাচ্চারা এতে করে স্কুলে যেতে পারবে না। আমার স্বামী যদি খারাপ কিছু করে তাহলে তদন্ত করে তার শাস্তি হোক। কিন্তু যারা অসৎ উদ্দেশ্যে এসব করেছে তাদেরও শাস্তি হোক।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাজধানীর কলেজগেট এলাকা থেকে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আটক করা হয় রনিকে। চলন্ত গাড়ি থেকে কয়েকজন মোটর বাইক চালক এবং জনতা তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সমর্পণ করে। সেসময় ঘটনাটির একটি ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরালও হয়। এ বিষয়ে একটি মামলা হলে তিন দিনের রিমান্ডে শেরে বাংলা নগর থানার পুলিশি হেফাজতে আছে রনি হক।

শেয়ার করুন: