এবার শিক্ষকদের জন্য আসছে সুখবর

খাত উল্লেখ না করলেও নন-এমপিও ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য আগামী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে ৫০০ কোটি টাকা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা বাবদ ৫৮৬ কোটি টাকা ।

আগামী ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলেই বাজেটে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহবার হোসাইন।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব বিষয় প্রকাশ্যে আলোচনা এসেছে তাতে এমপিওভুক্তির বিষয়টি স্পষ্ট না থাকায় শিক্ষকরা না জেনেই আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

রবিবার থেকে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরুর প্রাক্কালে শিক্ষ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এরপর শিক্ষকরা সরকারের পক্ষ থেকে আরও স্পষ্ট ঘোষণার জন্য তাদের আন্দোলন আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহবার হোসাইন বলেন, ‘শিক্ষকদের জন্য সুখবর আছে। তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে।’

বাজেটে সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকার বিষয়ে সচিব বলেন, ‘সব কিছু বাজেটে থাকবে বিষয়টি এমন নয়। এটি হয়তো প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে ঘোষণা দিতে পারেন। এর জন্য আন্দোলন নয়, বাজেট পাস না হওয়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জন্য ১৫ হাজার কোটি রাখা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বরাদ্দ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্টে দিতে ৪০০ কোটি টাকা, বৈশাখী ভাতার জন্য ১৮৬ কোটি টাকা এবং নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

সরকার রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী বছরে শিক্ষকদের জন্য উপহার হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিবেন। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে এ তিনটি খাতের কথা অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেননি।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) মহাসচিব ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি আদায়ে আমরা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ রেখেছি।

শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করায় শিক্ষাবান্ধব শেখ হাসিনা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সমাধান হবে না। আমাদের দাবি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হোক।’

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের অষ্টম জাতীয় পেস্কেল ঘোষণা করার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বৈশাখী ভাতা চালু করেন। তবে বঞ্চিত ছিলেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এছাড়া বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেট পেতেন না। গত দুই বছর ধরে শিক্ষকরা বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সমগ্র চাকরি জীবনে একটিমাত্র ইনক্রিমেন্ট পেতেন।

জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী তারা এই সুযোগটি বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হয় না।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, সারাদেশে চার লাখ ৭৭ হাজার ১৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। সরকারি চাকরিজীবীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দিতে বছরে অতিরিক্ত ৫২০ কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার ৩৫৬ টাকা দরকার।

আর মূল বেতনের ১০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা দিতে বছরে আরও ১৭৩ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার ৪৫০ টাকা লাগবে। দুই খাতে বছরে বাড়তি ছয়শত ৯৩ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার ৮০৬ টাকা প্রয়োজন।

অপরদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে সুস্পষ্ট বরাদ্দ না থাকায় গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন কয়েক শত শিক্ষক।

এ সময় পুলিশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আটক করে নিয়ে যায়। পরে আন্দোলন স্থগিত করার প্রতিশ্রুতিতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে সারা দেশের এক হাজার ৬০৯টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) এমপিওভুক্ত করা হয়।

ওই সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা অর্জন করার পরেও এমপিওভুক্তির তালিকা থেকে বাদ পরে। এর আগে ছয় বছরও এমপিওভুক্তি বন্ধ ছিল। সবমিলে গত ১৪ বছরে মাত্র দুইবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়।

তবে এই সময়ে সাত হাজার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করেছে। সারাদেশের এমপিওবিহীন সাত হাজার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে বার্ষিক দুই হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা চাহিদা দিয়েছে মাউশি।

সরকার মাত্র ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে জাতীয় সংসদের আসন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। সে ক্ষেত্রে আসন প্রতি ৩টি করে মোট ৯০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাহমুদন্নবী ডলার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেই আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম।

এখন তার আশ্বাসের বাড়ি ফিরে যেতে চাই। সব প্রতিষ্ঠানকে এক সঙ্গে এমপিও দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা না হলে অনেক শিক্ষকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

কারণ ১৭-১৮ বছর ধরে অনেক শিক্ষকরা বিনাবেতনে চাকরি করছেন। তাদের বয়স প্রায় শেষের দিকে। বিচ্ছিন্নভাবে এমপিও দেওয়া হলে অনেকেই বাদ পরবেন।

প্রয়োজনে শিক্ষকদের বেতন চলতি বাজেটে ২০-২৫ শতাংশ দেওয়া হোক। বাকিগুলো পরের বছরগুলোতে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হোক। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না ।

গতকাল আটকের ব্যাপারে তিনি বলেন, কর্মসূচি ঈদ পর্যন্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। আমরা সেটি আগামীকাল (আজ সোমবার) সকাল ৯টা পর্যন্ত স্থগিত করেছি। এর মধ্যে সরকারের ঘোষণা আসলে আন্দোলন স্থগিত করবো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাউশির এই চাহিদা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। প্রথমে বরাদ্দ রাখা হয়নি। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে চিঠি লিখেন।

শেয়ার করুন: