পাঁচ দিনের সফরে গত বছর এপ্রিলে ভারতে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ভারত সফরকালে তিনি তার জন্মস্থান কোচবিহার জেলার দিনহাটায় যান। সেখানে তিনি তার পৈতৃক বাড়িতে অবস্থান করেন এবং ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান। এছাড়া স্থানীয় কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে এরিক এরশাদ, দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, ব্যক্তিগত সচিব মো. জসিম উদ্দিন ও সহকারী মো. ওহাব। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যক্তিগত সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আখতার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ১৯৩০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারিতে মোহাম্মদ এরশাদের হোসেন জন্মগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৪৭ সালে তার বাবা মোহাম্মদ মকবুল হোসেন কুচবিহারের দিনহাটা থেকে রংপুর শহরের সেন-পাড়ায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ।
এরশাদ ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন তার সেনা বিভাগের কমিশন লাভের সময় নাম পরিবর্তন করে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ করেন । ১৯৭১ – ১৯৭২ সালে ৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর কমান্ড্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শুধু এরশাদ নয় বঙ্গবন্ধু যার থেকে রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন, সেই শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জন্মস্থান মেদিনীপুরে! বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাড়ি ও জন্মস্থান বাংলাদেশে নয়, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে! যে ডক্টর কুদরাত-এ খুদাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি এবং যাকে শেখ মুজিবের শাসন আমলেই শিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছিল তার জন্ম ও বাড়ি বীরভূমে! বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের জন্ম ও বাড়ি বাংলাদেশে নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে!
সঙ্গীত জগতের বিখ্যাত শিল্পী, যাকে নিয়ে বাংলাদেশ গর্ববোধ করে থাকে, সেই আব্বাস উদ্দিন আহমদের জন্ম এবং বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, যার বাড়ি ও জন্মস্থান বাংলাদেশে নয়, পশ্চিমবঙ্গের বশীরহাটে। বাংলাদেশের অতি বরেণ্য শিল্পী হিসেবে যিনি সমাদৃত এবং যিনি ছিলেন আওয়ামী রাজনীতির একনিষ্ঠ সমর্থক, সেই পটুয়া কামরুল হাসানের বাড়ি বর্ধমান ও জন্ম কলকাতায়।
এছাড়া শিল্পীদের মধ্যে প্রথম সারির অনেকের জন্মই বাংলাদেশের বাইরে, পশ্চিমবঙ্গে। এদের মধ্যে আছেন কিবরিয়া, শফিউদ্দীন ও মুর্তজা বশীর। প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফীর বাড়ি ও জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে। ১৯৬১ সালে আইউব খানের আমলে প্রবল সরকার বিরোধিতার মুখে রবীন্দ্র জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি সভাপতি ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদের বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদে ও জন্ম কলকাতায়।
বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী ও ১৯৭২ সালের সংবিধানের খসড়া প্রণয়নকারী হলেন ডক্টর কামাল হোসেন। তার জন্ম কলকাতায়। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ইংরেজি ভাষ্যের বাংলা অনুবাদক এবং একনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ সমর্থক ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ, সাহিত্যিক ও গবেষক ডক্টর আনিসুজ্জামানের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বশীরহাট ও জন্মস্থান কলকাতা।
যে কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ চেয়ারের অধ্যাপক নিযুক্ত করা হয়েছে তার জন্ম বাংলাদেশে নয়, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। সাহিত্যিক শওকত ওসমানের বাড়ি ও জন্মস্থান ছিল পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায়! সদ্যপ্রয়াত সেক্টর কমান্ডার কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের বাড়ি ছিল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় এবং তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালে এরশাদের থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নুরুদ্দীনের বাড়ি ছিল পশ্চিমবঙ্গে এবং তিনি সেখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।