একদিনেই তিন বছরের সমান বৃষ্টিপাত! বিশ্বের জলবায়ুতে কি চরম বদল আসছে?

ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালি সাইক্লোনে তছনছ হয়ে গেছে পারস্য উপসাগরীয় দেশ ওমান। ঘুর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেনেও। ওমানের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাইক্লোন ‘মেকুনু’-র দাপটে একদিনেই তিন বছরের সমান বৃষ্টিপাত হয়। তীব্র ঝোড়ো হাওয়া ও অত্যধিক বর্ষণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যর খবর পাওয়া গিয়েছে।

এদিকে সাইক্লোন আসার সময় ওমানের বাসিন্দাদের কেউ কেউ স্মার্টফোনের ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন সেই দৃশ্য। হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা টুইস্টারে দেখা গিয়েছিল মেঘ থেকে বাতাস পাক খেতে খেতে হাতির শুঁড়ের মতো নেমে আসছে মাটিতে, আশপাশে যা পাচ্ছে টেনে নিচ্ছে সেই ঘুর্ণিতে। ওমানে সাইক্লোন মেকুনুর আছড়ে পড়ার দিনে যেন সেই টুইস্টার ছবির দৃশ্যই উঠে এল বাস্তবে।

ঘন্টায় প্রায় ১৭০ থেকে ১৮০ কিমি বেগে ঝড় বয়ে গিয়েছে ওমানের ওপর দিয়ে। কোথাও কোথাও এই দাপট পৌঁছেছিল ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটারের ওপরেও। ওমানের সমুদ্র উপকূলগুলি রাশি রাশি ধ্বংসস্তূপে ছেয়ে গেছে। রাস্তায় রাস্তায় বিশাল বিশাল গাছ, গাছের ডালপালা পড়ে আছে।

বন্ধ রয়েছে সালাহ বন্দর। অবশ্য বিমানবন্দরটি চালু করা গিয়েছে। ছুটি দেওয়া হয়েছে প্রাইভেট কোম্পানি ও এস্টাবলিশমেন্টগুলিতে। বন্ধ আছে ব্যাঙ্ক পরিষেবা।

ব্যাহত হয়েছে পানি ও বিদ্যুত পরিষেবাও। দেশের প্রায় ৫০০ টি পরিবার সাইক্লোন মেকুনুর দাপটে বাস্তুচ্যুত। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে এখনও অনেক দিন লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এত শক্তিশালি সাইক্লোন কোনওদিন দেখেনি ওমান। ফলে প্রশ্ন উঠেছে সারা বিশ্বের জলবায়ুতে কী চরম বদল আসছে? সাইক্লোন 'মেকুনু'র প্রভাবে একদিনেই ২৭৮.২ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। যা সারা ওমানের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের তিনগুন।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দক্ষিণ ওমানের দোফার প্রদেশের। সালাহ শহর সহ গোটা জেলারই অবস্থা খুব খারাপ। জারি হয়েছে জরুরী অবস্থা এমনিতে শুকনো আবহাওয়ার দেশ ওমান। সেখানে এর আগে এরকম ভয়াবহ ঝড়-বৃষ্টি বন্যা হয়নি।

সাইক্লোনের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত তো ছিলই পাশাপাশি আরব সাগরে তীব্র জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। দুয়ের প্রভাবে প্রবল বন্যার মুখে পড়েছে ওমানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর সালাহ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওমানের বড় শহরগুলির সব রাস্তাঘাট পানির তলায় চলে যায়। ক্রমে পানি বাড়তে থাকে। বিপর্যয়ের দ্রুততায় ড্রাইভাররা রাস্তার ওপরেই গাড়িগুলি ফেলে পালাতে বাধ্য হন। বন্যায় সেসব ভেসে যেতে দেখা গিয়েছে।

ওমানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন বলা হচ্ছে মেকুনুকে। এর আগে ক্যাটেগরি ২ এর সাইক্লোন এদেশে দেখা যায়নি। প্রথমে ক্যাটেগরি ২ সাইক্লোনের স্তরে ফেলা হচ্ছিল 'মেকুনু'কে। আছড়ে পড়ার পরে, ক্রমশঃ ক্যাটেগরি ৩-এর ভয়াবহতায় পৌঁছে যায় ঝড়টি। ঝড়ের দাপট কমলেও বন্যার পানি নামার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

শুকনো আবহাওয়ার দেশ ওমানের বিভইন্ন শহরের রাস্তা যেন একেকটা নদী হয়ে গিয়েছে। সাইক্লোন মেকুনুর দাপটে যে তীব্র জলোচ্ছাস ও বন্যা হয়েছে তাতেই আরব সাগরের তলা থেকে উঠে এসেছে নানা আজব জিনিস। মিলেছে কালাজাদুর উপকরণও। সাধারণত কারোর ক্ষতি করতে এরকম থলে বা শিশি আরব সাগরে ফেলা হয়।

সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া, টাইমস অফ ইন্ডিয়া

শেয়ার করুন: