‘আমি কাল শুনলাম আমার চোখের জলটা নাকি নাটক? তোর সেটা মনে হতেই পারে। তাই আমি তোর জীবন থেকে চলে গেলাম।’-এ কথাগুলো ফেসবুকে লেখার কিছুক্ষণ পরই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বিশ্বজিৎ দাস (১৭) নামে এক কিশোর।
রোববার দুপুরে কলকাতার দমদম থানা এলাকার নয়াপট্টির দুর্গাবতী কলোনি থেকে ওই কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। খবর আনন্দবাজারের।
বিশ্বজিতের বাবা খোকন দাস পেশায় রিকশাচালক। বিশ্বজিৎ একটি প্রেশারকুকারের কারখানায় কাজ করত।
নিহতের মা সুমিত্রা জানান, স্থানীয় এক কিশোরীর সঙ্গে ছেলের এক বছর ধরে ঘনিষ্ঠতা ছিল। সম্প্রতি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় মেয়েটির।
তা নিয়ে কদিন ধরেই সেই কিশোরীর সঙ্গে অশান্তি চলছিল বিশ্বজিতের। সেসব কারণেই বিশ্বজিতের সম্পর্কটি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেনি ছেলেটি। তাই ফেসবুকে কথাগুলো লিখে বিশ্বজিৎ।
এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, বাড়িতে সিলিংয়ের বাঁশে ওড়নার ফাঁস থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই কিশোরকে দেখা যায়। ঘরের দরজা ভেঙে তাকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা বিশ্বজিৎকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এর পরেই বিশ্বজিতের মা সুমিত্রাকে ফেসবুকের ওই লেখার কথা জানান কিশোরের এক বন্ধুর মা। তারাই জানান, ওই কিশোরের লেখায় প্রণয়ঘটিত কারণে অবসাদের ইঙ্গিত মিলেছে। এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যা।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার পৌনে ৩টার দিকে বিশ্বজিৎ একটি গ্রাফিক কার্ড ‘পোস্ট’ করে। সেখানে লেখা ছিল, ‘বড় লোকের ভালোবাসা প্রকাশ পায় দামি দামি উপহারে! আর গরিবের ভালোবাসা প্রকাশ পায় দুই ফোঁটা চোখের জলে’!
ওই ‘পোস্টে’ই নিজের মনের ভাব বোঝাতে কিশোর লিখেছে- ‘সবাই ভালো থেকো, সবাই সুখে থেকো, কখনও মন খারাপ করো না আর কখনও কারও মন নিয়ে খেলা করো না! এর ৩১ মিনিট পরেই সিলিংফ্যানে দড়ির ফাঁস লাগানো ছবিও ‘পোস্ট’ করা হয়েছে বিশ্বজিতের প্রোফাইলে।
চার মিনিটের মাথায় আবার একটি ‘পোস্ট’। লেখা, ‘সব মানুষই ভালবাসে। কিন্তু প্রথম ভালোবাসার মানুষকে খুব কম মানুষ পায়। কারণ যে আপনাকে প্রথম ভালোবাসতে শেখায়, আপনাকে প্রথম কষ্টও সেই দেবে।’
পরে এই লেখাই ‘কভার ফোটো’ করে বিশ্বজিৎ। প্রথম লেখায় একজন মন্তব্যও করেছেন, ‘ঠিকই বলেছো ভাই’। ‘কভার ফোটো’ করা লেখাটি একজন ‘শেয়ার’ করেছেন।
তবে পরিবারের দাবি, বিশ্বজিতের মৃত্যুর আগে সেসব বিষয়ে কিছুই টের পাননি অভিভাবকরা।