বিট কয়েন

নিষিদ্ধ বিট কয়েনে ঝুঁকছেন বাংলাদেশিরাও

অধিক লাভের আশায় এ কয়েন কিনতে গিয়ে প্রতারণারও শিকার হচ্ছেন অনেকে। ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা আর বিট কয়েন—যা-ই বলা হোক না কেন, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা। এটিকে শেয়ার বাজারের একধরনের শেয়ারই বলা যায়, কারণ এর দাম ওঠা-নামা করে। ফলে বিট কয়েন সম্পর্কে অবহিত মানুষজন অধিক লাভের আশায় এটি কিনে থাকেন।

যদিও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এটিকে নিষিদ্ধ কয়েন বা মুদ্রা বলে আখ্যা দিয়েছে; তারপরও থেমে নেই বিট কয়েন বিক্রি ও সংগ্রহের কাজ। এখন এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও। একটি চক্র তলে তলে প্রায় লক্ষাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে এই নিষিদ্ধ কয়েন বা মুদ্রা।

বিট কয়েন নিয়ে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, বিট কয়েন মূলত কোনো মুদ্রা নয়। এটিকে ধরাও যায় না, ছোঁয়াও যায় না। পুরোটাই ভার্চুয়াল।

বিট কয়েন বিক্রির জন্য অনেক সাইট রয়েছে। তাতে সোনালি বা রুপালি এবং বিভিন্ন রঙের বাহারি নকশাসংবলিত একটি পয়সা বা মুদ্রার ছবি দেওয়া হয়। আর তাতে লিখে দেওয়া হয় মুদ্রাটির মূল্যমান কত হবে। সে অনুযায়ী বেচাকেনা হয় মুদ্রাটি।

একটি মুদ্রা সহজে একজন ক্রেতা কিনতে পারেন না। যেমন একটি বিট কয়েনের মূল্য বর্তমানে ছয় লাখ ৪২ হাজার টাকা। তবে ক্রেতার সুবিধার্থে এটিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করে বিক্রি করা হয়। এর ক্ষুদ্রতম ভাগকে শাতসি বলে।

এ মুদ্রা কেনার পর তার মূল্য পরিশোধ করতে হয় ব্যাংকের হিসাব, বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধমে। যারা এ কয়েনের ব্যবসা করেন তারা সাধারণত নিজের নামে বিট কয়েনের সাইটে গিয়ে বিভিন্ন অক্ষর ও সংখ্যার সমন্বয়ে একটি অ্যাকাউন্ট বা আইডি খোলেন। তারপর সে আইডি থেকে চলে লেনদেন।

পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে একজন বিট কয়েন বিক্রেতা তার ক্রেতাকে কয়েনটি পাঠাতে পারেন। ক্রেতা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তাকে টাকা পাঠাতে বা সরাসরি দিতে পারে। বিট কয়েনটি পাঠিয়ে দিয়ে সে অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিয়ে চাইলে আবারও আরেকটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রটি আরও জানায়, বিট কয়েনের বাজার ওঠা-নামা করায় বেশির ভাগ ক্রেতা এর প্রতি ঝুঁকে থাকে। দেখা গেছে সম্প্রতি একেকটি বিট কয়েন সাড়ে পাঁচ লাখ পর্যন্ত দাম ওঠে। কিছুদিন আগে একটি মুদ্রার দাম ছাড়িয়ে গিয়েছিল এরও কয়েক গুণ।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে বাঙালিরা এমন বিট কয়েন বেচাকেনার সন্ধান পাওয়ার পর তার প্রতি ঝুঁকছেন। পরে বিদেশ থেকে অধিক লাভের আশায় কিনে রাখছেন। কেউ অধিক লাভের আশায় এ কয়েন কিনতে গিয়ে প্রতারণারও শিকার হচ্ছেন।

এদিকে সিআইডির একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি মালয়েশিয়া প্রবাসী এক বাঙালির কাছে বিট কয়েন বিক্রির কথা বলে প্রতারণা করেন জাকারিয়া সরকার (২০) নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে গিয়ে সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইমের ইকনোমিক ক্রাইম ও এসটিজি ইউনিট জাকারিয়া সরকারকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারের পর জাকারিয়া অকপটে স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশে বিট কয়েনের ক্রেতা প্রায় লক্ষাধিক। দিন দিন এর ক্রেতা বাড়ছে। তিনি কিছু ওয়েবসাইট খুলে তাতে বিট কয়েনের ব্যবসা চালাতেন। আর তিনি এটি করে আসছিলেন গত চার বছর থেকে। অর্থাৎ জাকারিয়া বিট কয়েনের ব্যবসাটি জোরালোভাবে চালালেও তা এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউই জানতেন না।

জাকারিয়া সিআইডিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্যের সূত্র ধরে তদন্ত করছে সিআইডি। তবে কে বা কারা জাকারিয়াকে দিয়ে এ ব্যবসা চালাত, তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তবে এর পেছনে ১০ থেকে ১২ জনের একটি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে সিআইডির টিম। এর আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক কীভাবে বাংলাদেশে ঢুকেছে এবং কারা বিদেশে বসে তা নিয়ন্ত্রণ করছে, তাও জানার চেষ্টা চলছে।

গ্রেফতারকৃত জাকারিয়া সিআইডির কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি ও তার সহযোগীরা মিলে বিদেশ থেকে বিভিন্ন বিলাসী পণ্য ও ডিজিটাল মুদ্রা ক্রয় করতেন। তারপর তা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আনতেন। আর এসব পণ্যকে তারা বিট কয়েন বলেই জানেন। আর এসব বিট কয়েন বেচাকেনার পর গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইন্টারনেটকে কাজে লাগাতেন তারা। অনলাইনের মাধ্যমে মূলত চালাতেন এই ব্যবসা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জাকারিয়া নিজেই ক্রেতা আবার নিজেই বিক্রেতা। তিনি বিভিন্ন গ্রাহক সংগ্রহ করতেন এবং তাদের কাছে বিট কয়েন পৌঁছে দিতেন।

জাকারিয়াকে গ্রেফতারের সময় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ, তিনটি পেনড্রাইভ ও সিডি জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত ডিভাইসগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে, নেটেলার, বিটিসি, স্ক্রিলসহ বিভিন্ন ওয়ালেট থেকে অবৈধভাবে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এনে ওয়ালেটে প্রচুর পরিমাণ ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা এবং বিট কয়েন, নেটেলার স্ক্রিল ডলার লেনদেন করা হয়েছে এমন তথ্য রয়েছে।

জাকারিয়া আরও জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার ইউএস ডলার অবৈধভাবে লেনদেন করতেন। গত ১৬ মে, রাজধানীর বসিলা গার্ডেন এলাকা থেকে জাকারিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল ইসলাম তালুকদার জানান, জাকারিয়া বিট কয়েনের ব্যবসায় জড়িত বলে তা স্বীকার করেছেন। তবে এ চক্রটির অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন: