'প্রধানমন্ত্রী আমাকে বাঁচান, বুকে টেনে নেন' মেডিক্যাল ছাত্রীর আকুতি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
আজ না পেরে বাধ্য হয়ে আপনার কাছে খোলা চিঠি লিখছি। আমি জানিনা, ঠিক কোন ঠিকানায় আর ফোন নম্বরে আমি আপনাকে খুঁজে পাবো। তাই খোলা চিঠি লিখে দিলাম, কেউ যদি দয়া করে আমার এই আহাজারি আপনার নিকট পৌছায়!

আমার বয়স ২৩। আমি একজন ফাইনাল ইয়ারের মেডিকেল ছাত্রী। আজ আড়াই মাস ধরে মৃত্যুর সাথে লড়ছি! আমার একিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার যা মধ্যম পর্যায়ে ধরা পড়ে।

এখন আমাদের দেশের বিভিন্ন অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য ডাক্তাররা আমাকে বলেছেন, হাতে বেশি সময় নেই। আমাকে দ্রুততম সময়ে অ্যালোজেনিক ট্রান্সপ্ল্যান্টে যেতে হবে যা বাংলাদেশে এখনো শুরু হয়নি এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে যার উন্নত চিকিৎসা রয়েছে কিন্তু অত্যন্ত ব্যায়বহুল (৮০ লক্ষ টাকা) যা আমার মধ্যবিত্ত বাবা মায়ের পক্ষে ব্যায় করা সম্ভব নয়।

কেমো নিয়ে নিয়ে আমরা সর্বশান্ত। আরও যত দেরী হবে ততই কেমো খরচ এবং আমার মৃত্যুঝুকি বৃদ্ধি পাবে। আমার জীবনের শুরুতেই আজ মেঘের অন্ধকার নেমে এসেছে। হায়াত আল্লাহর হাতে তবু চেষ্টা করে দেখতে যদি পারতাম! যদি আমার চিকিৎসাটা হতো! যদি আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারতাম!

আপনি তো কত অসহায়ের পাশে ছিলেন, কত পিতামাতা হারা সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন, আমিও এই দেশের এবং আপনারই সন্তান তবে কেন আমাকে বুকে টেনে নেবেন না, এই দিনে?

আমি মানি, আমি বিখ্যাত সাবিনা ইয়াসমীন না, আমি ছোটখাটো একজন মেডিকেল ছাত্রী। তাই বলে কি আমার জীবনের কোন মূল্যই নেই? বেঁচে থাকলে দেশের জন্য আমি কি কিছুই করতে পারতাম না?

আমিও তো মেডিকেল কমিউনিটিরই একজন। প্রতি মুহূর্তে আমি মৃত্যুর প্রহর গুণছি। এক একদিন সময় আমার জীবনের প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে ধীরে ধীরে

দেশমাতা! আপনি কি এই অসহায় মেয়েটির বেঁচে থাকার এই যুদ্ধে শামিল হবেন?

জারিন তাসনিম রাফা
আদ-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ
সেশন:২০১৩-১৪

চিঠিতে মারণব্যাধিতে আক্রনাত জারিন তাসনির লেখা। লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী বরাবর। জারিন তাসনিম রাফা রাজধানীর আদ-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেলের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী।

বুক ভরা স্বপ্ন ডাক্তার হবে কিছুদিন পর। নভেম্বর মাসেই রেগুলার প্রফে বসার কথা। পড়াশুনা নিয়ে চরম দৌড়। নিজের দিকে তাকানোর এক মুহূর্তের সময় নেই।

হঠাৎ একদিন জ্বর আসা শুরু হলো, তবু পাত্তা দেননি জারিন। শরীর খুব দূর্বল লাগে। তবু মনের জোরে কলেজে যাওয়া আসা। বান্ধবীরা সবাই নিষেধ করল এই অবস্থায় কলেজে আসতে।

৭ দিন কেটে গেল। জ্বরের মাত্রা কমছেই না সাথে অসম্ভব দুর্বলতা। ডাক্তার দেখানো হলো। অনেকগুলো টেস্ট এর সাথে ডাক্তার সিবিসি (cbc) ও দিলেন।

জারিন নিজেই গিয়েছিলেন রিপোর্ট নিতে। রিপোর্টের নিচে লেখা Acute Myeloblastic Lukaemia. জারিনের পায়ের তলার মাটি সেদিন যেন সরে গিয়েছিল।

জারিনের ভাষ্য, আমি দৌঁড়ে পপুলারের ল্যাবে ছুটে যাই এই আশায়, রিপোর্ট টা কারো সাথে বদলে যায়নি তো? দেখি না। তবু আমার বিশ্বাস হয়না। তারপর আইসিডিডিআরবি আর বিএসএমএমইউ থেকে কনফার্ম হই।

এরপর ড: ইউনূস আমাকে অ্যাপোলো হসপিটালের ডা: আবু জাফর মো সালেহর কাছে পাঠান। এরপর থেকে আমি দুইমাস অ্যাপোলোতে চিকিত্সাধীন।

অ্যাপোলোতে জারিনের পিসিআরে জানা যায় তাঁর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট লাগবেই। বাঁচার একটাই পথ। কিন্তু ততদিনে ২টা কেমো আর আনুষঙ্গিক চিকিৎসা খরচে জারিনেরা সর্বশান্ত! এই পর্যন্ত প্রায় ২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে যা জারিনের বাবা মা এবং নিজের মেডিকেল কলেজের মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে।

জারিন বিছানায় শুয়েই বলেন, এই মুহূর্তে আমরা শূন্য। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের ক্ষমতা আমাদের নেই। এর মধ্যে ভারতে গিয়েছিলাম প্রথম কেমোর পর, কলকাতার টাটাতে। তারা আমাদের সমস্ত খরচসহ ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ রুপি রেডি রাখতে বলেছে। অবস্থা খারাপ হলে আরো বেশি লাগতে পারে। আমার মা বাবা আমাকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফেরত আসে।

আমি আপনাদেরই এক ছোট বোন যার একজন ডাক্তার হবার কথা ছিল সে জীবনের সাথে লড়ছি। আপনারা সবাই মিলে এগিয়ে আসলে এটা অসম্ভব কিছু না, আমি জানি হয়ত আমি আবার ফিরে আসতে পারব।

তাই আমি আপনাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। যদি কেউ পারেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই যদি এগিয়ে আসেন আমি AML কে হারিয়ে নিশ্চয়ই জয়ী হবো।

জারিন আজ বৃস্পতিবার নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে লিখেছেন, 'আমার একটা প্রশ্ন পুরো ডাক্তার সমাজের কাছে! একজন ডাক্তার মারা যাচ্ছে টাকার অভাবে, আপনারা চেয়ে চেয়ে দেখবেন? দেশের লক্ষাধিক প্রফেসর, ডাক্তাররা এগিয়ে আসলে কি আমি বাচঁতে পারতাম না? মৃত্যুর আগে এই প্রশ্নটা রেখে গেলাম।'

ব্যাংক একাউন্ট নম্বর:
Jarin Tasnime Rafa
সাউথ ইস্ট ব্যাংক বনশ্রী ব্রাঞ্চ
সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর-০০১২৭০০০০০০০৯

ফোন নম্বর: ০১৫৩৪৯৫৩৯৩৫ (বিকাশ)
রকেট একাউন্ট: ০১৫৩৪৯৫৩৯৩৫-৮

শেয়ার করুন: