অভিনেত্রী তাজিন আহমেদকে স্মরণ করে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এ স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন ‘তাজিন আহমেদ, সব সময় হাসিমাখা এই মেয়েটির আগে আমি চিনতাম তার মা দিলারা জলি আন্টিকে। আমার বাবা আর জলি আন্টি একই অফিসে কাজ করতেন। অনেক আদর করতেন আমাকে। তারপর কেটে গেছে অনেক বছর।’
চয়নিকা চৌধুরী তাজিন আহমেদের প্রশংসা করে আরও লিখেন, ‘তারপর বিয়ের পর আরণ্যক-এর কারণে এবং তার লেখার ফ্যান হয়ে গেলাম আমি। তার ভদ্র মার্জিত ব্যবহার, আর মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি মুগ্ধ করত আমাকে। ২০০১ সালে আমার প্রচারিত প্রথম নির্মাণ আমার লেখা নাটক ‘এক জীবনে’র প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করলেন তিনি।
তার অভিনয় দেখে চোখে জল এসেছিল। সেই থেকে সখ্য। আমার অজস্র নাটক আর সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন এই মিষ্টি মেয়েটি। তার অনেক গুণ। লেখা, আবৃত্তি, অভিনয়, উপস্থাপনা।’ তাজিন আহমেদকে নিয়ে কয়েকটি স্মৃতিচারণা করে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, “একবার আমাকে একটি স্ক্রিপ্ট দিয়ে বললেন, ‘চয়ন আপু,আমার দেখা তুমি বেস্ট ডিরেক্টর। আমার একটা স্ক্রিপ্ট ডিরেকশন দেবে তুমি? আমি খুব খুশি হব। মনে আছে নাটকটির নাম ছিল ‘দুই হৃদয়’।
অভিনয় করেছিলেন তারিন আর শোয়েব। তারিনের সেই আবেগময় দারুণ অভিনয় চোখ ভিজিয়েছিল। দারুণ স্ক্রিপ্ট ছিল। লিখত খুবই ভালো। তারপর তার সঙ্গে ৭১ টিভিতে অনেক টকশোতে বসা হয়েছে। স্পেশাল কোনো শো হলেই আমাকে খুঁজত। দেখা হলেই অনেক আড্ডা গল্প। ফোনে কথা হতো দুই-তিন দিন পরপর। এবার নারী দিবসের একটি কাজে তাকে আমি একটি সিন-এ কাস্ট করেছিলাম। কী যে খুশি হলো! সেজে-গুজে এলো। বিজরী, দীপা আমি সেলিম ভাই সবাই আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম। সেটাই শেষ আড্ডা।”
তাজিন আহমেদের সঙ্গে চয়নিকা চৌধুরীর শেষ কথা হয়েছিল গত ১৫ মে। এ বিষয়ে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘শেষ কথা হয়েছিল ১৫ মে। সেদিন আমার শুটিং ছিল না। আগের রাতে বলল, চয়ন আপু, উত্তরা এলে এসো। কথা আছে। কফি খাব আমরা। ১৬-১৭ শুটিং থাকাতে বললাম, ২০ তারিখের পর আমরা বসব। সেটাই শেষ কথা। আহারে! কী কথা ছিল যা বলতে চেয়েছিল! আর শোনা হবে না কখনো? চয়ন আপু বলে মিষ্টি হাসি দিয়ে জড়িয়ে আর ছবি তুলবে না কেউ। কেউ বলবে না,চয়ন আপু, বুকে এত কষ্ট কেন?’
চয়নিকা চৌধুরী আরও বলেন, ‘তাজিন, বিকাল থেকে রাত আজ তোমার সঙ্গেই ছিলাম। কত্ত সুখ-দুঃখের কথা মনে পড়ে গেল! আমি যত না ভালোবাসতাম তার চেয়েও তুমি আমাকে অনেক বেশি… সত্যিকারের ভালোবাসতে…। অনেক অভিমানী ছিলে তুমি! বিশাল বিশাল টেক্সট করতে। উত্তর না দিলে কষ্ট পেতে, রেগে যেতে। সব মনে পড়ে যাচ্ছে। কত্ত কী!!
সত্যি জীবনটা অনেক ছোট। এক জীবনে এত কষ্ট পেলে তুমি! কিছুই করতে পারিনি তোমার জন্য। ক্ষমা করে দিও। আমি সত্যি লজ্জিত। অনেক কিছু করা উচিত ছিল। পারিনি। পরপারে সুখে থেক তাজিন। ওইখানেই তুমি অনেক ভালো থাকবে! অনেক দিন শান্তিতে ঘুমাতে পারনি। আজ তুমি পরম শান্তিতে ঘুমাও..। তুমি কি দেখতে পাচ্ছ কত্ত মানুষ, তোমার কত কলিগ এসেছে তোমাকে দেখতে! সবাই তোমাকে কত ভালোবাসে! অনেক প্রার্থনা। অনেক ভালোবাসা। চোখ ভিজে যাচ্ছে জলে!
আন্টির জন্য চিন্তা হচ্ছে। অনেক অনেক প্রার্থনা। জানি, পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ!! আহ!! কী কষ্ট!! আমার লেখা এক জীবনে নাটকের মতো বলতেই হয়..এক জীবনে এত কষ্ট কেন বল তো!!’ মঙ্গলবার বিকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। তার জানাজা বুধবার বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ছোটপর্দার একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন তাজিন আহমেদ। অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনা করেও জনপ্রিয়তা পান তিনি। নাট্যজগতে কাজের শুরুর দিকে তিনি আরণ্যক নাট্যদলের মাধ্যমে মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। পরে টেলিভিশন নাটক করে খ্যাতি অর্জন করেন। তবে গত কয়েক বছর টেলিভিশন নাটকে অনিয়মিত ছিলেন তাজিন। কিছুদিন আগে মঞ্চে আরণ্যকের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে অভিনয় করেন তাজিন। গত বছর নতুন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে (এনডিএম) যোগ দিয়েছিলেন তাজিন আহমেদ। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন তিনি।