‘একেবারেই চলে গেল, একটু শেষ কথাও বলে গেল না’

আমার বড় মেয়ে আর তাজিন একই বয়সের। আমার ছোট ভাইয়ের বিয়েতে তাজিনসহ আমরা সবাই মজা করছিলাম, বিয়ের অনুষ্ঠানে হঠাৎ করেই তাজিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তাড়াতাড়ি তাঁকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখানে আমরা চারদিন ছিলাম, বিয়ের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হলো। পরিবারের সবাই হাসপাতালে চলে আসি।

তার শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল, এই শ্বাস কষ্ট তাঁর ছোটবেলা থেকেই ছিল। তখন তাঁর পাশে বসে সেবা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু যখন একেবারেই চলে গেল, একটু শেষ কথাও বলে গেল না।’ গতকাল সন্ধ্যায় এভাবেই তাজিনকে স্মরণ করছিলেন তাজিনের ফুপু, বাংলাদেশের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী দিলারা জামান।

দিলারা জামান আরো বলেন, ‘প্রচণ্ড স্বাধীনচেতা মানুষ ছিল তাজিন, কখনো কাউকে নিজের কষ্ট বুঝতে দেয়নি। কারো বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ করেনি। এমনকি নিজের কষ্টও কাউকে বুঝতে দেয়নি।

কারো সঙ্গে কষ্ট ভাগ করেনি। নীরবে নিভৃতে অভিমান নিয়ে চলে গেছে। তার জ্বালা যন্ত্রণা কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয়নি। সারাজীবন নীরবে নিভৃতে কষ্ট সহ্য করেছে।’

গতকাল তাজিনের খবর দিলারা জামান যখন পান তখন তিনি শুটিং করছিলেন। বলেন, ‘আমি সকালে মধুমতি মডেল টাউনে শুটিং করছিলাম। দুপুরের দিকে ফোন পেলাম তাজিন খুব অসুস্থ। তখন সবাইকে বলি আমাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দাও, শুটিং শেষ করে তাজিনকে দেখতে যাব।

তারপর আবারও শুটিং করছিলাম, কিন্তু আমার মন মানছিল না, বারবারই তাজিনের কথা মনে হচ্ছে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম কিছু একটা হয়েছে।

এক সময় দেখলাম সবাই কেমন যেন কানাঘুষা করছে, আমার মনটা কেমন যেন করতে লাগল। আমি কারো কোনো কথা না শুনে হাসপাতালে চলে আসি। রাস্তায় শুনতে পাই তাজিন নেই।’

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে মারা যান অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪২ বছর।

ছোটপর্দার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন তাজিন আহমেদ। অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনা করেও জনপ্রিয়তা পান তিনি। নাট্যজগতে কাজের শুরুর দিকে তিনি আরণ্যক নাট্যদলের মাধ্যমে মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। পরে টেলিভিশন নাটক করে খ্যাতি অর্জন করেন।

তবে গত কয়েক বছর টেলিভিশন নাটকে অনিয়মিত ছিলেন তাজিন। কিছুদিন আগে মঞ্চে আরণ্যকের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে অভিনয় করেন তাজিন।

গত বছর নতুন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে (এনডিএম) যোগ দিয়েছিলেন তাজিন আহমেদ। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন তিনি।

শেয়ার করুন: