৪ রুপির পেঁয়াজ – ভারতের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলো বলছে, গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে পেঁয়াজের ব্যাপক উৎপাদন, সরবরাহের পাশাপাশি রমজানে চাহিদা কমে যাওয়ায় দামে এই ধস নেমেছে। জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম বলেন, রমজান শুরুর কয়েক দিন আগে পেঁয়াজের দাম কিছুটা চড়া ছিল।
ভারতের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার লাসাগাঁওয়ে পেঁয়াজের দামে ব্যাপক ধস নেমেছে। গত দুই দিনে সেখানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি চার টাকায়! ব্যাপক লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে সেখানে কৃষকের কান্না ঝরছে।
অথচ সেই আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বাংলাদেশের বাজারে পৌঁছতেই বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়! আর খুচরা বাজারে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৩০ টাকায়। চড়াদামে কিনতে গিয়ে দেশের ভোক্তাদেরও চোখে কান্না ঝরছে।
তখন হিলি স্থলবন্দরে ট্রাক সেলে কেজি ২২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, দাম কমতে কমতে গতকাল সেই পেঁয়াজ কেজি ১২ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভারতে পেঁয়াজের দামে ধস নামার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, এখনো সেই দামে পেঁয়াজ দেশে আসেনি। সেই দামে আসতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। তখন দাম হয়তো আরো কমবে।
তিনি বলছেন, তখনো ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি, কিন্তু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ব্যাপক যানজটের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। এখন বাজারে নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা। আর বেলডাঙ্গা, সুখসাগর, শেখপুর ও ভেলোর জাতের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩ থেক ১৪ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানায়, হিলি, ভোমরা, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ট্রাকে করে পেঁয়াজ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পৌঁছে। ফলে স্থলবন্দরে দামের ওপর নির্ভর করেই চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম। স্থলবন্দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ গতকাল মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৮ টাকায়।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজের বাজারে এখন চরম মন্দাবস্থা, রমজানের শুরুতে দাম কিছুটা ছিল। তখন পাইকারিতেই ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, আর খুচরাতে সেটি ৪০ টাকা ছাড়িয়েছিল।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আকরাম উদ্দিন বলছেন, ‘চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যানজট স্বাভাবিক হওয়ার পর এত পেঁয়াজ বাজারে এসেছে, কেনার মানুষ নেই। ফলে লোকসান দিয়েই আমাদের ছেড়ে দিতে হচ্ছে, কারণ পচনশীল পণ্য গুদামে জমিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এই অবস্থা অন্তত এই সপ্তাহ চলবে।’
ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার গতকালের খবর বলছে, পেঁয়াজের ব্যাপক সরবরাহের কারণে ভারতে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার লাসাগাঁওয়ে পেঁয়াজের দাম গত তিন মাসে ৬৫ শতাংশ কমেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি যে পেঁয়াজের গড়দাম ছিল কুইন্টালপ্রতি এক হাজার ৭০০ রুপি, গত ২১ মে সেটির গড়দাম কমে ৬০০ রুপিতে নেমেছে।
সেই বাজারে পেঁয়াজ কুইন্টালপ্রতি সর্বনিম্ন ৪০০ রুপি থেকে ৮৬১ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ কুইন্টাল মানে ১০০ কেজির দাম সর্বনিম্ন ৪০০ রুপি, কেজি চার রুপি।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার খবর বলছে, মধ্য প্রদেশে কৃষকরা কেজি ৫০ পয়সা থেকে ৫ রুপিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে কান্না ঝরছে। এ জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা দাবি করেছে।
দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এর একেবারেই কোনো প্রভাব নেই। গতকাল কাজীর দেউড়ী বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩১ টাকা।
কেন জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ী আল মদিনা স্টোরের নাসির উদ্দিন বলছেন, সোমবার খাতুনগঞ্জ থেকে কিনেছি ২৩ টাকা দরে, গতকাল বিক্রি করেছি ৩১ টাকা কেজিতে।