সুবহানআল্লাহ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইফতার মক্কায়

প্রতি বছর রমজান মাসে সৌদি আরবের বায়তুল্লাহ শরিফ মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীতে অপূর্ব আধ্যাত্মিক আবহের সৃষ্টি হয়। সৌদি সরকারের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মক্কার কাবাঘরে প্রতিদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন করে দেশটির সরকার।

মসজিদুল হারামে ইফতার করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসরের নামাজের পর থেকে মুসল্লিরা উপস্থিত হয়। সৌদি আরবেও সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে খাদ্যাভ্যাস, সেই সঙ্গে ইফতারও।

এখন মসজিদুল হারামে প্রতিদিন ইফতারে রোজাদারদের জন্য দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের মসলাদার খাবার; স্যুপ বা শরবত, কাবাব, ফাতির (রুটি), লবণ, সবজি, খেজুর ও জমজমের পানি।

রমজান আসার ১৫ দিন আগে থেকেই মক্কায় রোজার প্রস্তুতি শুরু হয়। রমজানকে ঘিরে চারদিকে পড়ে যায় সাজ সাজ রব। একে অন্যকে জানায় রমজানের অভিবাদন। দেখা সাক্ষাতে মানুষ রমজানের সওগাত জানায় ‘শাহরু আলাইকা মোবারাক’ বলে। রমজানকে ঘিরে দাওয়াতি কাজ শুরু করেন অনেকেই।

বিভিন্ন রকমের হ্যান্ডবিল, লিফলেট, ছোট পুস্তিকা, সকাল-সন্ধ্যার দোয়ার ছোট কার্ড ইত্যাদি ছাপিয়ে মসজিদে মসজিদে বা ব্যক্তিপর্যায়ে বিতরণ করা হয়। আর এ ধারা অব্যাহত থাকে রমজান মাসজুড়ে।

রমজানের আগে থেকেই এখানে সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় সারি সারি তাঁবু। এগুলো রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য তৈরি করা হয়। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতার।

আর মসজিদগুলোতে থাকে ইফতারের ব্যবস্থা। কারখানার শ্রমিকরাও পান উন্নতমানের ইফতার সামগ্রী। রমজান উপলক্ষে সরকারিভাবে কর্মঘণ্টা কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়।

ইফতার সরবরাহ সওয়াবের কাজ। তাই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে মক্কা নগরীর হাজার-হাজার মানুষ ছাড়াও পবিত্র ওমরা করতে আসা বিশ্বের লাখ লাখ হাজি যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতার সামগ্রী নিয়ে ছুটেন পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামে।

গত বছর থেকে নতুন নিয়মে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে ইফতারির আয়োজন করা হচ্ছে। যাঁরা ইফতার সামগ্রী প্রদান করেন তাঁরা সুপারভাইজার ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন। তাঁরা ইফতার সাজানো ও পরিষ্কারের দায়িত্ব পালন করবেন।

মসজিদুল হারামের প্রায় ৯০টি গেট দিয়ে রোজাদার মুসল্লিরা ধীরস্থীরভাবে প্রবেশ করেন। সব ভেদাভেদ ভুলে এভাবে একসঙ্গে পাশাপাশি বসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে ইফতার গ্রহণের এ দৃশ্য বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না।

সৌদি আরবে গত নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ওমরা মৌসুম। ওমরা পালনের জন্য গত সাত মাসে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ধ কোটি মানুষ দেশটিতে এসে পৌঁছেছেন। ওমরা পালনকারীদের এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেশি।

এক সরকারি পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সৌদি গেজেট। তবে সৌদি নাগরিকরা রমজানের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর ওমরা আদায়ে মনোযোগী হবেন এবং রমজানের শেষ দশকে হারামাইন শরিফে ইতিকাফের জন্য একত্রিত হবেন। এভাবেই ওমরা আদায় ও পূণ্য কাজের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে রমজানের সিয়াম পালন করেন নবীর দেশের নাগরিক ও অতিথিরা।

শেয়ার করুন: