মিনার-ইসলাম-মসজিদ

বাবা আমাকে পূজা করতে বাধ্য করেছিল, আমি ইসলামে অটল থেকেছি

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সর্বোৎকৃষ্ট জানতে পেরে জিতেন্দ্র নামে এক যুবকের ইচ্ছে ছিল একদিন না একদিন তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন। কিন্তু জিতেন্দ্র তার ইচ্ছার কথা হিন্দু পরিবারকে কখনো জানতে দেননি। এর মধ্যেই ২৫ বছরের জিতেন্দ্র তার পারিবারিক টেক্সটাইল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তার বাবা-মার ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করেন। পরে ইসলামের প্রতি তার আকর্ষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে এবং মুসলিমদের ধর্ম চর্চা করতে চেয়েছিল। আর তাই ইসলামে ধর্মান্তরের একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে অবশেষে ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারিতে মুম্বাই সিএসএমটিতে এসেছিলেন জিতেন্দ্র।

মুম্বাই এসে তিনি একটি কল সেন্টারে চাকরি পেয়েছিলেন এবং সেখানে কর্মরত একজন মুসলিম বন্ধু তাকে কুর্লা স্টেশনের কাছে একজন মৌলভির নিকট পরিচয় করিয়ে দেয়। মৌলভির সহায়তায় তিনি অবশেষে একই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ধর্মান্তরিত হন। জিতেন্দ্র থেকে তার নাম মোহাম্মদ ইসলাম রাজা খানে পরিণত হন তিনি।

সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে রাজা বলেন, ‘জীবনটা সত্যিই ভাল ছিল। আমি আমার বেতন থেকে নতুন জামাকাপড় ও মোবাইল ফোন কিনেছি। আমি রাতে মসজিদটিতে সময় ব্যয় করতে শুরু করলাম এবং এটি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে আরো শিখতে সাহায্য করেছিল।’ ২৫ বছর বয়সী ইসলাম রাজা রাজস্থানের ঐতিহ্যগত হিন্দু মারওয়ারী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম জিতেন্দ্র ঘিসারাম। তার বাবা-মা তার সিদ্ধান্তকে মেনে নিবেন, তা তিনি কখনো ভাবতে পারেন নি।

যাইহোক, বিষয়টি জানতে পেরে তার বাবা তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বললে তিনি বাধ্য ছেলের মতো বাড়ি চলে যান। কিন্তু তিনি কল্পনাও করেননি, নিজের স্বজনরা ‘ঘর ওয়াপসি’র কি নির্মমতা তার জন্য জমা রেখেছেন। বাড়ি ফিরলে রাজাকে নিষ্ঠুরভাবে পিটানো হয়েছিল। তার চুল ও দাড়ি কেটে ফেলা হয় এবং তাকে হিন্দুধর্মের দিকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়। এক সপ্তাহ আটক থাকার পর অবশেষে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

এখন তার বাবা-মা তার বিচারের জন্য পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনেছেন তারা এবং এমনকি এও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি দেশ-বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারেন। রাজা তার ধর্ম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে চেয়েছিলেন। তিনি আহমেদনগরে একটি মাদ্রাসার সন্ধান পান। সেখানে তিনি ইসলামের উপর দুই মাসের একটি কোর্সের সুযোগ পান। তিনি দীর্ঘ সময়েও এটি ছাড়তে পারলেন না।

তাই ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি তার পরবর্তী বড় আত্মত্যাগ করেন। তিনি তার ১৩,৩০০ টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে দেন। কোর্সটি করার জন্য তাকে প্রমাণ দেখানো প্রয়োজন হয় যে তিনি একজন মুসলিম। সুতরাং তিনি এফিডেভিট করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম পরিবর্তন করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি নতুন জীবন শুরু করার জন্য আহমেদনগরে চলে যান।

সেখানেই রাজার বাবা মা তার সন্ধান পেতে সক্ষম হয়েছিল। তার ‘পে-টিএম’ একাউন্টে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর আপডেট করলে তার বাবা-মাকে তার অবস্থান সম্পর্কে বুঝতে পারেন। ২৪ মার্চে চেন্নাইয়ের পুলিশকে নিয়ে তার বাবা ও বোন জামাই সেখানে উপস্থিত হন। তিনি আগে থেকেই জানতেন যে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর তার বাবা-মা পুলিশের কাছে অনুপস্থিতির অভিযোগ দায়ের করেছিল। যাইহোক, রাজা পুলিশকে জানান, তার কোর্স সম্পূর্ণ করার পর তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন।

কিন্তু তার বাবা তাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করেন। তিনি রাজাকে জানান, সে যেন অন্তত তার ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে একবার দেখার জন্য চেন্নাই যায়। রাজা যেতে রাজি হন কিন্তু তখনো তার ভিতর উদ্বিগ্ন কাজ করেছিল। এ জন্য তিনি আহমেদনগর, কালেক্টর অফিস ও চেন্নাই পুলিশের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এতে তিনি তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে লিখেন যে তার পরিবার তাকে হিন্দু ধর্মে ফিরে আসার জন্য বাধ্য করতে পারে।

তিনি চেন্নাইয়ের বাড়িতে ফিরে গেলে তার বাবা-মা তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। আসলে এটি করা হয়েছিল তাকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। রাজা বলেন, ‘তারা আমার সিদ্ধান্তকে উৎসাহিত করেছিল। আমাকে তাদের বাড়িতে নামাজ আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং একবার আমার বাবা আমাকে শুক্রবারের নামাজের জন্য ১৫ কিলোমিটার দূরের একটি মসজিদে নিয়ে যান। এর সবই ছিল আমার ভিতর বিশ্বাস জন্মনোর জন্য যে তারা আমাকে মেনে নিয়েছেন।’

নৃশংস বিশ্বাসঘাতকতাঃ ১৯ এপ্রিল রাজার বাবা তাকে তার দাদার বাড়ি রাজস্থানের বিলারা গ্রামে পাঠান। এক সপ্তাহ পরে তার পিতামহের বাড়িতে তার বংশধরেরা তার উপর আক্রমন করে।

রাজা বলেন, ‘২৬ এপ্রিল আমার বাবা আমাদের সকল আত্মীয়কে একত্রিত করে আমাকে হিন্দু ধর্মে ফিরে যেতে চাপ দেন। আমি তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তারা আমাকে নির্মমভাবে মারধর করেছিল। তারা জোরপূর্বক আমার মাথার চুল ও দাড়ি কামিয়ে দেয় এবং তারপর আমাকে পূজা করতে বাধ্য করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আমার জামাকাপড় এবং ইসলামিক বইগুলিকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। তিনি আমার মোবাইল ফোনটিও ভেঙে দিয়েছিলেন এবং আমার ওয়ারলেট এবং পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।’ রাজা জানতেন যে প্রতিরোধ করলে তার জন্য অবস্থা আরো কঠিন হতে পারে। তাই তিনি তার বাবার আদেশ অনুসরণ করেন। তার বাবা-মা তার উপর নজর রাখতেন এবং তাকে প্রতিদিন মন্দিরে যেতে বাধ্য করত।

২ মে অবশেষে তিনি পালাবার সুযোগ পেলেন। তার বাবা তাকে ২ কিমি দূরের একটি বাস ডিপোতে একজন যাজককে নামিয়ে দিয়ে আসার জন্য তাকে ডাকেন। তিনি ৪ মে পালিয়ে মুম্বাইতে আসেন কিন্তু বুঝতে পেরেছিলেন যে এখানে আর নিরাপদ নন। একই দিন তিনি অজানা অবস্থানে চলে যান। রাজা বলেন, ‘আমার বাবা-মায়ের জন্য আমার একটি সফট কর্নার রয়েছে এবং ইসলাম আমাকে তাদের প্রতি সদয় আচরণ করার শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু তারা আমার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, যা অগ্রহণযোগ্য। আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং আমার ইচ্ছা তাদের তাদের কাছে মূল্যায়িত হয়নি। প্রয়োজন হলে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

শেয়ার করুন: