মুক্তামণির গল্পটা – বাবা-মা আপু হীরামণি সবাই বলে আমি আবার আগের মত ভালো হয়ে যাবো। আপু হীরামণির সাথে স্কুলে যাবো। সহপাঠীদের সাথে খেলা করবো। আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে।
খুব ইচ্ছে বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আমি ভোট দিব। আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো জানাচ্ছিলেন বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের ১২ বছর বয়সী শিশুকন্যা মুক্তামণি।
একটি সময়ে মুক্তামণির সুস্থতা নিশ্চিত ভাবলেও বর্তমানে তার অবস্থা খুব-ই আশঙ্কাজনক। এক কথায় মুক্তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। কেউ চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি। প্রত্যকে নিজ নিজ স্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা আর সাহায্য- সহানুভূতি করেছেন।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট থেকে ১ মাসের জন্য রিলিজ নিয়ে গ্রামে আসেন মুক্তামণি। গ্রামে আসার পর বেশ কিছু দিন বেশ ভাল ও সুস্থ ছিলেন। নিয়মিত ডান হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ড্রেসিং করতে হয়।
প্রাথমিক দিকে হাতের অবস্থা উন্নতি হলেও ধীরে ধীরে ক্রমশই অবনতির দিকে ঢুলে পড়ছে। হাতের ব্যান্ডেজ পরিষ্কার করতে কোন ভাবে দেরি হলেই ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আবার বেশিক্ষণ খোলা অবস্থায় আলো- বাতাস লাগলে হাতটি ফুলে যাচ্ছে। হাতের যন্ত্রণায় সবসময় কান্না-কাটি করছে মুক্তা।
তার অবস্থা দেখে সবাই বুঝতে পারে হাতের যন্ত্রণা কতটুকু বেড়েছে। মুক্তামনির ডান হাত ফের ফুলে গেছে। ড্রেসিং করতে দেরি হলেই জন্মাচ্ছে পোকা। ছুটছে দুর্গন্ধ।
রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত তার হাতটি আদৌও ভাল হবে কি না, তা বলতে পারছে না কেউই। তার ডান হাত ফুলে গিয়ে ফেটে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মুক্তামণির ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে বের হয়েছে অনেকগুলো পোকা। বেঁচে থাকার গল্পটা হয়ত বা শেষের দিকে এমনি অনুভূতি তার স্বজনদের।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, কখনো আশা করিনি আমার মেয়ের অসুস্থতার দিকে দেশের এত বড় বড় মানুষগুলোর নজর আসবে।
ভাবতেই ভাল লাগে মুক্তামণির সুস্থতার সব দায়িত্ব স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা খুব আন্তরিকতা সাথে দেখেছেন মুক্তামণিকে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে দেশের বাইরের ডাক্তারেরা মুক্তামণির হাত দেখে আঁতকে ওঠেন। চিকিৎসা করাতে পারবেন না বলে জানান। দেশের চিকিৎসকগণ মুক্তামণির বারবার অপারেশন করিয়েছেন।
ডাক্তারদের চেষ্টার কোন ঘাটতি ছিল না। মানুষের যতটুকু করার সেটার কমতি রাখেনি কেউ। ডান হাতে পচন ধরেছে। ড্রেসিং করতে দেরি হলেই ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আমরা মুক্তামণির বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছি। বাকিটুকু মহান আল্লাহর উপর।
বর্তমান চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাক্তাররা মুক্তামণির বর্তমান অবস্থার ছবি দেখে বলেছেন তার অবস্থা খারাপ। ডাক্তাররা তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
বর্তমানে আর নতুন করে অপারেশন করার মতো অবস্থা নেই তার। কোন বিকল্প চিকিৎসা আছে কি না তাও জানি না। বর্তমানে সকল ঔষধ খাওয়া বন্ধ রাখতে বলেছেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকগণ। বলেছেন তার শরীরে অনেক এন্ট্রিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে।বর্তমানে সেগুলোর প্রয়োজন নেই।
এদিকে, প্রতিনিয়ত মুক্তামণির অবস্থার খবরাখবর নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন। সুস্থ হয়ে ওঠার আশা রাখতে পারছেন না চিকিৎসকরাও। রোগের বিস্তার শুধু হাতে সীমাবদ্ধ নেই। সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে গেছে।
এক মাসের জন্য রিলিজ নিয়ে গ্রামে আসলেও পরবর্তীতে ঢাকায় যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন মুক্তা। পরিবারের সদস্যরাও জোরপূর্বক তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়নি। অন্যদিকে মুক্তার অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় ফেরার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেন।
মুক্তামণির মা আসমা বেগম জানান, আমার মুক্তাকে হয়তো বাঁচাতে পারলাম না। ডাক্তার বা মানুষের কোন হাত নেই। সব মানুষগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও কৃতজ্ঞ। মুক্তামণি বেঁচে থাকলে সবাই খুব খুশি হবে। সবাই মুক্তামণির জন্য দোয়া করবেন।