যে খবরে তোলপাড় সারাদেশ- হঠাৎ করে রাজনীতির মাঠে সরব ড. কামাল হোসেন। বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত বারিধারায় অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ উড়াল দিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরবেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কর্মকর্তাদের। আগামী নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করবেন মার্কিন সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে যাবেন ব্রিটেনে। সেখানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতার কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। এখানেই তিনি বৈঠক করবেন তারেক জিয়ার সঙ্গে। রাজনৈতিক অঙ্গনের খবর হলো, তারেক জিয়ার ভাড়াটে হিসেবেই ড. কামাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আঁদাজল খেয়ে লেগেছে। ড. কামাল হোসেনও গতরাতে বি. চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন,‘এই সরকারের পতন ঘটানোই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।’
সরকারের পতন ঘটাতে দেশে যেমন তিনি ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন, তেমনি দেশের বাইরে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে সে কারণে ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাসে একাধিক বৈঠক করেছেন। জানা গেছে, আগামী নির্বাচন কীভাবে করা উচিত, সে ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা তিনি মার্কিন দূতাবাসে হস্তান্তর করেছেন। এই প্রস্তাবনাই তিনি নিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে কেন এত তৎপর ড. কামাল হোসেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। একটি সূত্র বলছে, দেশের সুশীল সমাজ নির্বাচনকালীন সময়ে একটি সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে কথা বলছেন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ধারণা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাই এই দাবিকে কোনো দাতা দেশই সমর্থন দিচ্ছে না। এজন্যই সুশীল সমাজ শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে কাজ করছে। ড. কামাল বা অধ্যাপক বি. চৌধুরীকে এই সর্বদলীয় সরকারের প্রধান করার আলাপ-আলোচনা ঘরোয়াভাবে চলছে। সেজন্যই ড. কামাল হোসেন হয়তো মাঠে নেমেছেন। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, তারেক জিয়াই ড. কামাল হোসেনকে মাঠে নামিয়েছেন।
কূটনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি আস্থার সংকটে ভুগছে। অধিকাংশ দাতা দেশ তারেক জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। তাই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ব্যাপারে বিএনপির আকুতি কূটনীতিকদের কাছে তেমন আবেদন রাখতে পারছে না। এই সুযোগে সরকারও বিএনপির ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসার কোনো উদ্যোগ তিনি বা তাঁর দল নেবে না। এরকম অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেন দরবার করছেন ড. কামাল হোসেন।
আর এই লবিং করার জন্য ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র আত্মপ্রকাশ। ড. কামাল হোসেন নিজেই বলেছেন, ‘সব দলকে তিনি এক প্লাটফরমে আনতে চান, এই সরকারের বিরুদ্ধে।’ সব দলের ঐক্যের নেতা তিনি এই পরিচয় দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেন দরবার করা সহজ। অবশ্য অন্যের জন্য লবিং করা ড. কামাল হোসেনের জন্য নতুন নয়। ২০০৭ সালেও ড. কামাল হোসেন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতায় রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তদবির করেছিলেন।
এবারও তিনি বিএনপির পক্ষে আন্তর্জাতিক তদবিরে নেমেছেন। আর লন্ডনে তারেক জিয়ার সঙ্গে বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে বিএনপি কি রাজনীতি করবে আগামীতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক জিয়ার এই কৌশল পুরোনো। ছাত্র শিবির ও জামাতকে দিয়ে ২০১৪ তে তারেক সন্ত্রাস করেছিলেন। আর এবার ড. কামাল হোসেনকে দিয়ে নির্বাচনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে এই তদবির করে তারেক জিয়ার কাছ থেকে ড. কামাল হোসেন কি পাবেন তা এখনো অজানা।