যে গ্রামে ৪০০ বছর ধরে কোনো শিশুর জন্ম হয়নি!

৪০০ বছর ধরে এ গ্রামে কোনো নারী সন্তান প্রসব করেন না। এখন সবার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কি এ গ্রামে কারোর বাচ্চা হয় না? হ্যাঁ! অবশ্যই হয়, তবে সেই সব বাচ্চার জন্ম হয় গ্রামটির সীমানার বাইরে গিয়ে।

যেখানে হাসপাতাল আছে, বেশিরভাগ প্রসুতি মা সেখানেই তাদের সন্তানের জন্ম দেন। আর এই হাসপাতালটি গ্রামের বাইরে অবস্থিত। এই প্রথা চলে আসছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে, যখন এখানে হাসপাতালের সুবিধা ছিল না তখন থেকেই। ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজগড়ের ‘সঙ্ক শ্যাম জী গ্রাম’। ভোপাল শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

কিন্তু কেন এমন প্রথা? জানা যায় কথিত আছে, গ্রামের সীমানার মধ্যে যদি কোনো নারী সন্তান প্রসব করেন, তাহলে মা ও শিশু দুজনেরই ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। শিশুটি হয় বিকলাঙ্গ অথবা মৃত হয়ে জন্মায়। মায়ের ক্ষেত্রেও মৃত্যু বা অঙ্গহানি অবধারিত বলে দাবি করেছেন ওই গ্রামবাসীরা।

গ্রামবাসীরা বলছেন, গ্রামের নারীদের ওপর ঈশ্বরের অভিশাপ আছে। তাই এরকম টা হয়। তাই কোনো লিখিত আইন না থাকলেও গত ৪০০ বছরে সঙ্ক শ্যাম জী গ্রামে কোনো শিশুর জন্ম হয়নি।

হঠাৎ কোনো জরুরি অবস্থায় প্রসুতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলে রোদ ঝড় জল যাই হোক, তাকে কোনো ক্রমে গ্রামের সীমানার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রসবের জন্য।

এ নিয়ে গ্রামটির পঞ্চায়েত প্রধান নরেন্দ্র গুর্জর জানিয়েছেন, ‘৯০ শতাংশ শিশুর জন্ম হাসপাতালেই হয়। একান্ত প্রয়োজনে প্রসুতিকে গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামবাসীরা শুধুমাত্র এই প্রয়োজনের জন্যই গ্রামের বাইরে একটি ঘর-ও করে রেখেছেন।’

কিন্তু কবে, কীভাবে গ্রামের ওপর এই অভিশাপ লাগল? গ্রামের বয়স্করা জানিয়েছেন এর পেছনে আছে এক কীংবদন্তী। জানা যায় অভিশাপ-এর সূচনা সেই ষোড়শ শতকে। সেসমময় সঙ্ক শ্যাম জী গ্রামের মন্দিরটি তৈরি হচ্ছিল।

নির্মাণ কর্মীরা কাজ করছিলেন। সেসময় গ্রামের এক সুন্দরী নারী গম ভানতে শুরু করেন। এতে নির্মাণ কর্মীদের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। নির্মাণের কাজ ছেড়ে তারা এই সুন্দরীর গম ভানা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এতেই প্রবল চটে যান ঈশ্বর। অভিশাপ দেন গ্রামের নারীদের।

অভিশাপটা ছিল, এই গ্রামে আর কোনো নারী সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না। সেই থেকেই এই প্রথা চালু আছে ‘সঙ্ক শ্যাম জী গ্রামে’। তবে ঈশ্বর যে গ্রামটিকে কেবল অভিশাপই দিয়েছেন তা নয়, আশির্বাদও আছে। কী সেই আশির্বাদ?

ভারতবর্ষে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পানাসক্তি একটা বড় সমস্যা। এর জেরে, সংসারে অশান্তি, মারধর, এমনকি খুন-জখমও লেগেই থাকে। এই গ্রামের এক প্রবীণ জানিয়েছেন, সঙ্ক শ্যাম জী গ্রামে একজনও মদ মুখে তোলে না। মাংসও খায় না। এটাই একমাত্র আশির্বাদ।

শেয়ার করুন: