ধর্ষণ

ইংল্যান্ডে জিন তাড়ানোর নামে তরুণীকে ধর্ষণ

ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরে এক তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে বাংলাদেশি নাগরিকের ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তাঁর নাম কমর উদ্দিন (৬৮)। গত শুক্রবার লেস্টার ক্রাউন কোর্টের বিচারক টিমোথি স্পেনসার কিউসি এ রায় ঘোষণা করেন। ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লেস্টারের হাইফিল্ডস এলাকার লিংকন স্ট্রিটে তরুণীর বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, কমর উদ্দিন স্থানীয় কমিউনিটিতে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ছিলেন। মানসিক বিপর্যস্ত ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর জিন তাড়াতে ইমাম কমরকে বাসায় ডাকেন তাঁর বাবা। মোমবাতির অল্প আলোয় তাকে ধর্ষণ করেন কমর।

এ ঘটনার পর কমর উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জামিন নিয়ে তিনি জার্মানি পালিয়ে যান। গত বছরের নভেম্বরে জার্মানি থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে আসা হয় বিচারের মুখোমুখি করতে।

রায়ের আগে বিচারক টিমোথি স্পেনসার কাঁদতে থাকা কমর উদ্দিনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কাঁদছেন কেন?’ আসামি বলেন, ‘আমার মনে আঘাত লাগছে।’

বিচারক বলেন, ‘আপনার কেবল নিজের জন্য খারাপ লাগছে?’ উত্তরে কমর বলেন, ‘আমার পরিবারের জন্য, আমার জন্য, প্রত্যেকের জন্য।’ বিচারক বলেন, ‘বাজে কথা বলবেন না, আপনি একজন প্রতারক, ভণ্ড ও আপনার ধর্মের জন্য লজ্জার।’ বিচারক স্পেনসার বলেন, ‘মেয়েটির বয়স মাত্র ১৯ ছিল। আর আপনি ঠিকই বলেছেন আপনার নাতনির বয়সীই ছিল সে।’

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেয়েটি খুব হতাশাগ্রস্ত ছিল। পরিবারের এক সদস্য মারা যাওয়ার শোক সে ভুলতে পারছিল না। সে পরিবারের অন্যদের মতোই আধ্যাত্মিক পৃথিবী ও জিনে তার গভীর আস্থা ছিল।’

বিচারক স্পেনসার কমরকে বলেন, ‘আপনি এই কমিউনিটিতে একজন বিশ্বস্ত ইমাম ছিলেন। আপনি এটা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে আপনি জিন তাড়াতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘(মেয়েটির) পরিবার আপনার ওপর আস্থা রেখেছিল, বিশেষ করে মেয়েটির বাবা এবং আপনি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’

স্পেনসার বলেন, ‘আপনাকে তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হলো এবং দুর্দশাগ্রস্ত মেয়েটির জিন তাড়িয়ে আপনি তাকে সহায়তা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনি আপনার ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্য মেয়েটির দুর্দশা দূর করতে কোনো সহায়তা করেননি, বরং আরো হতাশায় ফেলেন।’ বিচারক বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে তার জন্য আপনার কোনো সংযম ছিল না। নিজের ইচ্ছামতো আপনি তাকে ধর্ষণ করেন।’

আদালত বলেন, পরীক্ষায় মেয়েটির শরীরের আসামির ডিএনএ পাওয়া গেছে। বিচারক আসামিদের বলেন, ‘আপনি ধর্মের প্রতি এটা লজ্জাজনক প্রতারক এবং ইসলামিক কমিউনিটিতে যে অবস্থান আপনার, তার জন্যও লজ্জার।’

রায়ের পর কমর উদ্দিনের আইনজীবী জেমসন ম্যাকলার্নন বলেন, এর আগে তাঁর কোনো অপরাদের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাঁর বড় পরিবার রয়েছে বাংলাদেশে। তাঁরা কমর উদ্দিনের রোজগারের ওপর নির্ভরশীল।

শেয়ার করুন: