রনির থাপ্পড়ে – এতগুলো টাকা আমি কেমনে দেব বলতেই ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তা দিতে বলেন রনি। ক্ষিপ্ত হয়ে অফিসে থাকা হকিস্টিক দিয়ে মাথায় বাড়ি মারলে আমি মাথা সরিয়ে নিই।
আর আঘাতটি এসে লাগে আমার বামকানে। এতে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়ে বাম কানের শ্রবণশক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাম কানে শুনছেন না বলে জানান ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক মো. রাশেদ মিয়া। এ পর্যন্ত তিন দফা চিকিৎসা নিয়েও কানের শ্রবণশক্তির কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানান তিনি।
গতকাল সকালে মুঠোফোনে কথা বলার সময় বুঝতে অসুবিধার মতো কথা বলেন তিনি। বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বামকানে শুনছি না আমি। খুব ভার হয়ে আছে। ডান কানে শুনে কথা বলছি। তাই একটু সমস্যা হচ্ছে।
রনি ও তার সহযোগীদের প্রাণনাশের হুমকির ভয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার কথা বলে রাশেদ মিয়া জানান, রনির চড়-থাপ্পড় আর মারধরে শরীরের অধিকাংশ স্থানে ব্যথা হয়েছে।
অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যেতে হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়াও তেমন করতে পারছি না। বৃহসপতিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানায় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি ও তার বন্ধু নোমান চৌধুরী রাকিবের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাত-আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়া।
অভিযোগে রাশেদ জানান, গত প্রায় আট বছর যাবৎ তিনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের জিইসি মোড় শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি ও তার অনুসারীরা তার প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতো এবং চাঁদা নিতো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি রনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের অফিসে এসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় রাশেদ এতগুলো টাকা কোথা থেকে দেবে জানতে চাইলেই নুরুল আজিম রনি তাকে মরধর করে।
ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রনি প্রথমে রাশেদ মিয়াকে আঙ্গুল তুলে শাসাতে ও টেবিল চাপড়ান। একপর্যায়ে রাশেদের গালে থাপ্পড় মারতে দেখা যায় রনিকে। পরে চুলের মুঠি ধরে টানা হেঁচড়া করে বারবার রাশেদের গালে থাপ্পড় চালাতে থাকেন। এর মধ্যে মাঝে মাঝে চলতে থাকে শাসানো। এভাবে প্রায় আড়াই মিনিট চলার পর রুম ছেড়ে বেরিয়ে যান রনি। কয়েক মুহূর্ত পর ফিরে এসে আবারো তর্কে জড়ান রনি।
পরে দীর্ঘ সময় কারো সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। পুরো ঘটনায় রাশেদকে করজোরে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, মারধরের এ ঘটনার প্রায় দুই মাস পর আবারো রনির নির্মমভাবে মারধরের শিকার হন রাশেদ মিয়া। ১৩ই এপ্রিল সুগন্ধার বাসা থেকে মুরাদপুর যাওয়ার পথে মোহাম্মদপুর মাজার এলাকায় আবারো রনি ও তার সঙ্গীদের আক্রমণের শিকার হন রাশেদ।
সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে এজাহারে তিনি লিখেছেন, আসামিগণ আমাকে একা পেয়ে টানা হেঁচড়া করে মুরাদপুর বুড়িপুকুর পাড় এলাকায় নিয়ে যায়। এ সময় তারা আগের মতোই ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বলি, এতগুলো টাকা আমি কেমনে দেব। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুল আজিম রনি অফিসে থাকা হকিস্টিক দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় বাড়ি মারলে আমি মাথা সরিয়ে নিই। আঘাতটি আমার বাম কানে লাগে। মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হয়ে আমার বামকানের শ্রবণশক্তি এখন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
এরপর দুই নম্বর আসামি হকিস্টিক দিয়ে আমাকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকেন। এ সময় রনি আমাকে ২০ লাখ টাকা না পেলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে অনেক বুঝিয়ে বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলি। এ সময় ১ নম্বর আসামি বাকি টাকা না দেয়া পর্যন্ত আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট জমা দিতে বলে। পরে রনির এক সহযোগী আমাকে সুগন্ধার বাসায় নিয়ে আসে।
এ সময় বাসায় ৩৫ হাজার টাকা পাই এবং সঙ্গে সঙ্গে তা হামলাকারীদের হাতে তুলে দেই, সঙ্গে রনির কথা মেনে আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্টও দেই। পরে তারা আমাকে মোটরসাইকেলে চট্টগ্রাম কলেজের গেটে ফেলে দিয়ে চলে যায়। এদিকে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারে মালিকানা আছে দাবি করে রনি বলেন, রাশেদ মিয়া আমার পার্টনার। কোচিং সেন্টারে আমার শেয়ার আছে।
বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ব্যবসায়িক হিসাব দিচ্ছিলেন না। আমার কাছ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছিলেন না। এসব বিষয়ে তার সঙ্গে আমার দূরত্ব হয়। তার কাছ থেকে কোনো চাঁদা দাবি করা হয়নি।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে মারধরের প্রমাণ হিসেবে কিছু ছবি ও একটি ভিডিও ফুটেজ আমরা পেয়েছি। রাশেদ মিয়ার চিকিৎসার কাগজপত্র মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। রনিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।