তারেক রহমান
তারেক রহমান

বর্তমানে কোন পদ্ধতিতে ব্রিটেনে আছেন তারেক রহমান?

যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই মধ্যে তিনি সপরিবারে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনে যাওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন তারেক রহমান। ওই সময় শারীরিক ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন বিভাগ তাকে আড়াই বছরের জন্য দেশটিতে বসবাসের অনুমোদন দেয়।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন। বর্ধিত মেয়াদ পেরিয়ে পাঁচ বছর পর দেশটির অভিবাসন আইন অনুযায়ী ২০১৩ সালে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন পান তারেক রহমান। লন্ডনে কিংডম সলিসিটার্সের প্রিন্সিপ্যাল ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী মূলত ইমিগ্রেশন আইন প্র্যাকটিস করেন। ব্রিটেনের অভিবাসন আইন ও তারেক রহমানের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, তারেক রহমান কোন ভিসায় ব্রিটেনে এসেছেন, তা আমার জানা নেই।

তবে ব্রিটেনের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কেউ পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে সরকার তাকে সেই আশ্রয় দিতে পারে। আবার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর না হলে হিউমান রাইটস গ্রাউন্ডেও ভিসা দিতে পারেন। এই আইনজীবী বলেন, অ্যাসাইলাম মঞ্জুর হলে প্রথমে পাঁচ বছরের ভিসা এবং এরপর ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন বা স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেওয়ার বিধান রয়েছে।

আবার হিউম্যান রাইটস গ্রাউন্ডে অনুমোদনের ক্ষেত্রেও দু’বার তিন বছর করে ভিসা অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। দুই মেয়াদে ছয় বছর শেষে ইনডেফিনিট লিভ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ব্রিটেনের অভিবাসন আইনে এর বাইরে আর কোনও ধরনের ভিসা আবেদনের সুযোগ তারেক রহমানের জন্য নেই। আর দুই প্রক্রিয়ার যে কোনোটির অধীনেই তার এতদিনে ব্রিটেনের ইনডেফিনিট লিভ বা বসবাসের স্থায়ী অনুমতি পাওয়ার কথা। উভয় ক্ষেত্রেই আবেদন করা হলে ইনডেফিনিট লিভ পাওয়ার এক বছর পর সিটিজেনশিপ (নাগরিকত্ব) দেওয়ার বিধান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে কথা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে। বিভিন্ন কূটনৈতিক তৎপরতার দায়িত্বে থাকা এ বিএনপি নেতা বলেন, তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে বৈধ স্ট্যাটাসেই বসবাস করছেন। দলের দায়িত্বশীল হিসেবে এটা আমি নিশ্চিত করছি। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তিনি অ্যাসাইলাম পেয়েছেন, সেটা কেবল তিনি ও তার আইনজীবীই বলতে পারবেন। তারেক রহমানের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ কীভাবে ব্রিটেনে স্ট্যাটাসবিহীন থাকবেন বলে পাল্টা প্রশ্নও রাখেন এই বিএনপি নেতা।

এদিকে তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন। সম্প্রতি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। এর আগে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে।

সর্বশেষ, গত ৬ মার্চ তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র কাছে স্মারকলিপি দেয় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। কিছুদিন আগে ডাকযোগে পাঠানো এক চিঠিতে তারেক রহমানের বিভিন্ন অপকর্ম ও মামলার রায়ের বিষয়েও অবহিত করা হয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যদের।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, তারেক রহমান সন্ত্রাস ও মানি লন্ডারিংয়ের গডফাদার, এটা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে। তিনি বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ও ফেরারি আসামি। ব্রিটেন যেহেতু আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, তাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। তারেক রহমান ব্রিটেনে অ্যাসাইলাম পেলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নাগরিকদেরও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার নজির রয়েছে।

তারেক রহমানকে ব্রিটেন থেকে দেশে ফেরাতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা স্বীকার করে নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, তারা তো ১০ বছর ধরে কম চেষ্টা করেনি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীরাও চেষ্টা করেছেন তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রিটেনে ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্তরা অনেকটাই ব্রিটেনের নাগরিকত্বের সমান মর্যাদা ভোগ করেন। ব্রিটেনে রাষ্ট্রবিরোধী,

জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসে জড়িত সন্দেহাতীতভাবে এমন অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ না হলে ইনডেফিনিট লিভের রেসিডেন্স কার্ডধারী কাউকের ব্রিটেন থেকে বের করে দেওয়ার নজির নেই। ফলে বাংলাদেশে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেও ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন পাওয়ায় ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন আইনে তাকে কীভাবে ফেরত পাঠানো হবে সে প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

উল্লেখ্য, স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান প্রায় ১০ বছর ধরে লন্ডনের কিংস্টন এলাকায় বসবাস করছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। ওই দিনই তাকে নেওয়া হয় কারাগারে। এর পরপরই দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তারেক রহমান। তখন থেকে লন্ডনে বসেই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ওই একই মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া তারেক রহমান।

শেয়ার করুন: