সত্যিকারের ডাক্তার কে?

ডাক্তার শব্দটির কথা শুনলে একটা বিশ্বাস, নির্ভরতার কথা মনে হয়। সৃষ্টিকর্তার একটা রুপ ডাক্তারের মাধ্যমেই ফুঁটে ওঠে। হাজারো ব্যবসায়িক ডাক্তারের মাঝে প্রকৃত ডাক্তারের সংখ্যা নিতান্তই কম। ইদানিং ডাক্তার শব্দটি শুনলে অনেকেই আঁৎকে ওঠে, যেন কসাইয়ের আরেক রুপ।

ঠাকুরগাঁওয়ে গরিবের ডাক্তার বলতে অনেকেই অনেককে বোঝেন। সত্যিকার অর্থে গরিবের ডাক্তার কিভাবে বোঝা যাবে? গরিবের দূঃখ যে বুঝবে, যে ভিজিট নেবেনা অথবা যা দেবে তাই নেবে। ভিজিট নেবেনা এমন ডাক্তার কমই খুঁজে পাওয়া যায়।

ইদানিং ডাক্তারদের নতুন ব্যাবসা শুরু হয়েছে ওষুধ কোম্পানির সাথে চুক্তি করে গাড়ি, বাড়িসহ সপ্তাহ অথবা মাস শেষে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া।অভিযোগ আছে অনেক ডাক্তারদের টাকার বান্ডিল নিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে দেখা যাচ্ছে।তারাই গরিবের ডাক্তার বনে যায়।

কে গরিবের ডাক্তার? যে ভিজিট কম নিয়ে অথবা না নিয়ে গরিবের প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় এবং দামী, দামী এন্টিবায়োটিক ওষুধ, দোকানে গিয়ে চোখ ছানাবড়া!

সে? নাকি সেই ডাক্তার যে তার প্রাপ্যটুকু নিক বা না নিক প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনের বাইরে একটি ওষুধ ও লিখবেনা সে?।বাড়তি ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় দামী ওষুধ লিখে দিয়ে কোম্পানির কাছে ঠিকই হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা অনেকেই।

তাহলে ভিজিট নেবার আর প্রয়োজন আছে কি? ওদিকে প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ এন্টিবায়োটিক খেয়ে অনেক শিশুর শরীর গঠনের ভিত্তি ভেঙ্গে পড়ছে। বোকা মানুষ বুঝেও বোঝেনা।

ঠাকুরগাঁওয়ের এক শিশু ডাক্তার যার কথা না বললেই না। ডাক্তার সাজ্জাদ হায়দার শাহিন, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব পরায়ণা একজন মানুষ। প্রয়োজনের বাইরে কথা বলতে পছন্দ করেন না।

ঠাকুরগাঁওয়ের ডাক্তারদের মধ্যে সর্বচ্চ ডিগ্রী ধারী তিনি। শুধু ডিগ্রি নয় জ্ঞানে, গুণে, হাত যশে জয় করছেন মানুষের মন। কোমলমতি শিশুদের প্রয়োজনের বাইরে দেননা একটা বাড়তি ওষুধও। কেননা কোন ওষুধ কোম্পানির সাথে নেই তার অবৈধ লেনদেন।

তাছাড়া অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে শিশুদের শরীর গঠনের ভিত্তি নষ্ট করতে চাননা তিনি। এমন সৎ ডাক্তার ঠাকুরগাঁওয়ে আরও আছেন, কিন্তু সংখ্যায় কম। ডাক্তার শাহিন নিয়মিত ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ডিউটি করেন, ডিউটি শেষে প্রাইভেট প্রাকটিস ও করেন কিন্তু হাসপাতালের বাইরে বাড়তি চাকুরী করেন না। তাই বলে কেউ ডাকলে যাননা তা নয়।

তার চেম্বারে ঢুকলেই দেখা যাবে নানান রং এর বেলুন যা শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে ভুমিকা রাখে। শিশুদের নিয়ে যিনি ভাবেন তার দ্বারাই সম্ভব এমন চিন্তা, চেতনার। শিশু রোগী দেখা শেষে ভিজিট নিজের হাতে কমই নেন।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভিজিট গ্রহণ করে তার সহকারী আরিফ তাই বলে ভিজিট নিয়ে নেই কোন বাড়াবাড়ি। তিনি বয়সেও বেশ নবীন, নেই কোন অহংকার, তার সাথে কথা বললেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার সধর্মিণী শিরিন আক্তার পপি ও পেশায় একজন গাইনী চিকিৎসক।

ডাক্তার শাহিনের জীবনের লক্ষ মহান এই পেশায় নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মানুষের সেবা করে যাবেন আজীবন। সাধারণ মনের এই অসাধারণ মানুষের ভক্তদের প্রশ্ন সত্যিকারের গরিবের ডাক্তার কে?

তার চেম্বারে ঢুকে তার অগোচরেই ছবিটি তোলা। জানলে হয়তো তিনি ছবি তুলতেই দিতেন না, কেননা প্রচার বিমুখ তিনি। তার কথা মানুষ তাকে চিনতে হলে তার কাজের গুণেই চিনবেন।

শেয়ার করুন: