‘আমি ডাকলে তুই আসিস না কেনো?’

এবার সংবাদ পাঠিকা ও তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মাহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এরআগে মারিয়া আক্তার ইকো নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিলো তার বিরুদ্ধে। ওই নারী দাবি করেছিলেন, ঘরে স্ত্রী-সন্তান রেখে তাকে জোর করে বিয়ে করার পর ৪ মাস সংসার করেছিলেন ওই ডিআইজি।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ডিআইজি মিজানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয় এবং অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ প্রধানের কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। ওই সময় এ সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে কারণে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।

এবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের এক নারী সংবাদ পাঠিকাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ডিআইজি মিজান। ওই সংবাদ পাঠিকার সঙ্গে ডিআইজির কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপস ফাঁস হয়েছে। যেখানে তার নারী ‘কেলেঙ্কারি’র ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশের জন্য ওই সংবাদ পাঠিকাকে দায়ী করে হুমকি দিতে শোনা যাচ্ছে তাকে। কথা বলার পুরোটা সময় অঝোরে কাঁদছিলেন ওই সংবাদ পাঠিকা।

তাদের কথোপকথনটি পুরোপুরি তুলে ধরা হলো-

মিজান: তোর জামাইরে ঘর থেকে বাইর হতে বল। পোলাপান রেডি আছে। সব রেডি আছে। আমার কথার বাইরে যদি চলোস তোরে মাইরা ফালামু।

সংবাদ পাঠিকা: আমি কোত্থাও যাইনি। আমার জামাইকে বলছিলাম, ওর অফিস চলছিলো।

মিজান: যেখানেই যাবি তোর নুড (অশ্লীল) ছবি পাঠানো হবে। তুই আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করছিস।

সংবাদ পাঠিকা: আমি কিছুই করিনি। আমার ছেলের কসম খাইয়া বলছি, আমি কিছুই করিনি।

মিজান: শুধু একটু বাসা থেকে বাইর হয়ে দেখ। তুই যদি আমার কথা না শুনোস, তুই সাম্বাদিক, …বাচ্চাদের বলবি আমি থ্রেট করছি। আমাকে সাসপেন্ড করাইছিস না?

সংবাদ পাঠিকা: আমি কিচ্ছু করি নাই, আমি কিচ্ছু করি নাই।

মিজান: তোকে অ্যারেস্ট করতে এখন ভাটারা থানার পুলিশ যাচ্ছে। সার্চ ওয়ারেন্ট হইছে। আসামি তুই আর তোর জামাই। আজকে কোর্টে মামলা হইছে। তুই আমার সাথে চ্যালেঞ্জ দিবি?

সংবাদ পাঠিকা: আমি আপনার সাথে কোনদিনই চ্যালেঞ্জ দেই নাই।

মিজান: আমার সাথে চ্যালেঞ্জ দিয়ে তুই আমার চাকরি খাইছিস। মিডিয়ায় সবকিছু দিছিস তুই।’

সংবাদ পাঠিকা: আমি জীবনে কোনদিন কাউকেই কিছু দেইনি।

মিজান: (গালি দিয়ে) এক সপ্তাহের মধ্যে তুই উত্তরা ছাড়বি। নাইলে তোরে মাইরা ফালামু। যা হয় হবে। তুই রেকর্ড কইরা রাখ।

সংবাদ পাঠিকা: (কাঁদতে কাঁদতে) প্লিজ আমার বাচ্চার জীবনটারে নষ্ট কইরেন না।

মিজান: তুই আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করছিস।

সংবাদ পাঠিকা: আমি কিচ্ছু করি নাই।

মিজান: তুই আসিস না কেন, আমি ডাকলে?

সংবাদ পাঠিকা: কসম করে বলছি, আমি মেন্টালি ভালো নেই। খুব অসুস্থ। আল্লাহ’র কসম, আপনি কোরআন শরিফ আমার হাতে দেন। আমি কাউকে কিচ্ছু দেইনি।’

মিজান: তোর জামাইরে বের হতে বল। রাস্তায় বের হতে বল। টুকরা টুকরা করব। আর তোরে করব ৬৪ জেলায় ৬৪ টুকরা।… গালি। আমার কথার বাইরে যদি ঢাকা শহরে চলছ তোকে আমি মাইরা ফালামু।

সংবাদ পাঠিকা: দয়া করে আপনি গাড়ি নিয়ে যান।

মিজান: এখন তুই আত্মহত্যা করবি। না হলে তোরে মাইরা ফালামু আমি। পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই। এখন বের হ। তোরে পাহারা দিতে ১০টা মোটরসাইকেল থাকবে। তুই আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে লাইভ দিবি, আমার বিরুদ্ধে লিখবি, জিডি কইরা রাখছি উত্তরা পূর্ব থানায়। জিডি নাম্বার দিবো?

সংবাদ পাঠিকা: আমার কিছু লাগবে না। আপনি যা করার করেন। আমি ইকো (মারিয়া আক্তার ইকো) না।

শেয়ার করুন: