পর্নো দুনিয়ার কিং চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ী! বিস্তারিত জানলে আতকে উঠবেন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছদ্মনাম রেনু আহমেদ। তবে তার প্রকৃত নাম মাহতাব রফিক। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সদস্য। রফিক তার পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ১৯টি পর্নো সাইটের অ্যাডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

গত রোববার রাতে এক সহযোগীসহ রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ টিম। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রফিক জানান, তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লালাপাড়ায়। পড়াশোনা করেছেন লন্ডনের কিংস্টোন ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল বিভাগে। চট্টগ্রামে ক্রিসমাস নামে তার পোশাক কারখানা রয়েছে।

বছর ছয়েক আগে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তার ২০ লাখ ডলার ক্ষতি হয়। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। তবে কিছুদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের ব্যবসা শুরু করেন।

সেখানে কিছু পর্নো সাইটের অ্যাডমিন হন রফিক। যারা তার সাইটে পোস্ট দিত, তাদের কাছ থেকে অর্থ নেন রফিক। তার নেতৃত্বে সারাদেশে পর্নো ব্যবসার একটি বড় জাল রয়েছে। যেখানে এখন পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তির সংশ্নিষ্টতা পাওয়া গেছে। উঠতি মডেল থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় রয়েছে।

সাইবার প্রতিরোধ বিভাগের ডিসি আলিমুজ্জামান বলেন, শনিবার রাজধানীর নিকেতনে অভিযান চালিয়ে পর্নো ব্যবসা ও এসকর্ট সার্ভিসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে রফিকসহ দু’জনকে ধরা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ জামাল আহমেদ বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের সদস্য সংখ্যা সাত হাজার। মাহতাব রফিক নামে কোনো সদস্য যদি এ ধরনের কাজে জড়ায় তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হবে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সাইবার প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ জানান, রফিক ও তার সহযোগীরা সংঘবদ্ধভাবে পর্নো ব্যবসায় সম্পৃক্ত। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও তারা বাংলাদেশি তরুণীদের পাচার করছে।

চাকরি দেওয়ার কথা বলে তরুণীদের দেশের বাইরে নিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করছে এ চক্র। মালয়েশিয়া থেকে যে ব্যক্তি এসব কাজে সহযোগিতা করছেন, তার পরিচয়ও পেয়েছে পুলিশ।

আন্তর্জাতিক পর্নো ব্যবসার সিন্ডিকেটের সঙ্গে তাদের কী ধরনের যোগাযোগ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কত মেয়েকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে বিদেশে নিয়ে অসামাজিক কাজে জড়িত করতে এ চক্রের সদস্যরা বাধ্য করেছেন, তা বের করার চেষ্টা চলছে। রফিক অন্তত ১৯টি পর্নো সাইটের অ্যাডমিন।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর গত শনিবার রাজধানীর নিকেতনের একটি পাঁচতলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসকর্ট সার্ভিসের নামে উঠতি বয়সী কিশোরীদের ব্যবহার করে পর্নো ব্যবসায় জড়িত করানোর অভিযোগে ছয় তরুণ ও এক নারীকে গ্রেফতার করে সাইবার প্রতিরোধ বিভাগ।

ছয় তরুণের মধ্যে তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। রোববার গ্রেফতার ছয় তরুণকে পর্নোগ্রাফি ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে স্কুল-কলেজপড়ূয়া দুই কিশোরীসহ নয় নারীকে। এ ছাড়া একই বাসা থেকে ১১ পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, এসকর্ট সার্ভিসের নামে এ চক্রের সদস্যরা কিশোরী-তরুণী ও উঠতি মডেলদের ব্যবহার করে নানাভাবে পর্নো ব্যবসা করে আসছিল।

তাদের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে অনেকের ছবি বিকৃত করে ব্যবহার করা হয়েছে। কারও কারও মোবাইল নম্বর সেখানে জুড়ে দেওয়া হয়। বিদেশিদের টার্গেট করেন তারা। অর্থের বিনিময়ে তরুণী ও কিশোরীরা তাদের সঙ্গ পেতে পারেন বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন: