খুনি কণিকা লাশের সঙ্গে রেখেছিলেন ব্যবহৃত কনডম, বেরিয়ে আসলো ভয়ঙ্কর যত তথ্য

ছেলের পরকীয়ার জেরে খুন হয়েছেন জনশক্তি ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম ভূঁইয়া (৭৫)। আর খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নিহতের ছেলে সৈকত হাসানের বান্ধবী লাবনি আক্তার কনিকা (২৩)। সানিহা ও ইয়াসিকা নামেও মেয়েটি পরিচিত।

এ খুনের ঘটনায় লাবনি আক্তার কনিকাসহ ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে মো. শাহ আলম ভূঁইয়া হত্যাকা-ের আদ্যোপান্ত। ইতোমধ্যে পুলিশের কাছে লাবনি আক্তার কনিকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

গত ৮ এপ্রিল বিকালে মো. শাহ আলম ভূঁইয়াকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় নিহতের বাসার অদূরে ওই লাবনি আক্তার কনিকার উত্তর গোড়ানের বাসায়।

ওইদিন রাতেই ওই বাসার একটি টিনশেড ঘরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় এই বয়োবৃদ্ধকে। পরে লাশটি একটি কালো রঙের লাগেজে ভরে গুমের চেষ্টা করে ঘাতক দল। হত্যার পরদিন কনিকা নিহতের বাসায় এসে তার পরিবারের লোকজনকে সান্ত¦নাও দিয়েছেন।

শাহ আলম ভূঁইয়া নিখোঁজের পর তিনি যাদের কাছে টাকা পেতেন সেই জনশক্তি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি-মামলা করার পরামর্শও দিয়েছিলেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত কনিকা খুনের ঘটনায় নিজেকে আড়াল করতে পারেননি।
পুলিশি তদন্তে তার নামধামও বেরিয়ে আসে। খুনের সঙ্গে নিহতের বড় ছেলে সৈকতেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সন্দেহ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল রাতে সবুজবাগের পূর্ব মাদারটেকে সিএনজি অটোরিকশায় অচেনা এক তরুণীর ফেলে যাওয়া লাগেজ থেকে শাহ আলম ভূঁইয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় কনিকাকে আটক করে পুলিশ।

সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয় কনিকার ছোট ভাই অনিক, বোন মৃত্তিকা ওরফে হীরা, ফুফু কুলসুম, বান্ধবী মিথি (এক পুলিশ কর্তার মেয়ে) ও কনিকার পরিচিত মনির ওরফে আলমগীর এবং নিহত শাহ আলমের বড় ছেলে সৈকত হাসান ওরফে রাজকেও।

গত শুক্রবার রাতে যশোরের বেনাপোল এলাকায় বাস থেকে নামার পর খিলগাঁও মডেল কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী কনিকা ও তার পরিচিত মনিরকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা এলাকায় বাবার লাশ দাফন করে ঢাকায় ফেরার পর আটক হন নিহতের ছেলে সৈকত হাসান।

উত্তর গোড়ানের নিজ বাসা থেকে আটক কনিকার ভাই অনিক বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) ও তার বোন মৃত্তিকা ওরফে হীরা কাশিমপুর কারাগারে আছেন। বৃদ্ধ শাহ আলমের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই পরিস্থিতির শিকার দরিদ্র সেই সিএনজি অটোরিকশার চালক মজিবর পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা অবশ্য কনিকা, সৈকত ও মজিবরের আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও অন্যদের ব্যাপারে কিছুই জানাননি। তারা বলছেন, আটক তরুণী রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলের ডিজে পার্টিতে নাচতেন।

তিনি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ইয়াবা বড়ি বিক্রি করতেন। তার পরিবারের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার মাও খিলগাঁও থানার একটি মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

অভিযোগ, ছেলে সৈকতের সঙ্গে কনিকার পরকীয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বৃদ্ধ শাহ আলম। পথের কাঁটা সরাতে কনিকাই পরিকল্পিতভাবে তার উত্তর গোড়ানের বাসায় শাহ আলমকে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

এদিকে অভিযুক্ত কনিকার মা শান্তি আক্তার ঊর্মি গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, লেখাপড়া করার উদ্দেশ্যে গত ১৪ এপ্রিল পোল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল তার মেয়ের।

এর আগেই এই ঘটনা ঘটল। সৈকতের সঙ্গে কনিকার পরকীয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করলেও এই হত্যাকা-ের সঙ্গে তার মেয়ে বা পরিবারের কেউই জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন। তাদের ফাঁসানো হয়েছে বলেও দাবি তার।

নিহত শাহ আলম ভূঁইয়ার মেয়ে নাসরিন জাহান মলি গতকাল আমাদের সময়কে জানান, তার বড় ভাই সৈকতের স্ত্রী-ছেলে-সন্তান রয়েছে। বিষয়টি জেনেও সৈকতের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন তার বান্ধবী কনিকা। এই নিয়ে তাদের পরিবারে সব সময় ঝগড়া হতো।

মাস তিনেক আগে বাসা ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান সৈকতের স্ত্রী। তাদের পরকীয়ার বিষয়টি সমঝোতায় এলাকায় বেশ কয়েকবার দেনদরবারও হয়। কিন্তু কনিকা ছিলেন নাছোড়বান্দা। হুটহাট চলে আসতেন বাসায়। সৈকতকে না পেলে আত্মহত্যারও হুমকি দিতেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিহত শাহ আলম ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

খিলগাঁও তালতলার মোবাইলের দোকান বিক্রির টাকা, ৩ মাসের ঘর ভাড়ার সঙ্গে বাকি টাকা যোগ করে তা জনশক্তি ব্যবসায়ীদের হাতেও তুলে দেন তিনি। বাবা শাহ আলমের শর্ত অনুযায়ী দুই মাস ধরে অনিকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন সৈকত। এতে খেপে যান কনিকা। এই নিয়ে বাসায় এসে হুমকি দিতেন কনিকা।

নাসরিন জাহান মলি আরও বলেন, তার বাবা নিখোঁজের পরদিন রাতে মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তারা। কিন্তু শাহ আলমের মৃত্যুর খবর ঘটনার পরদিন সকালে মলিরা না জানলেও কনিকা বাসায় এসে সান্ত¦না দিয়ে বলেন, কাকার মৃত্যুর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি সন্দেহ হয় তাদের।

রাতে লাশ শনাক্তের পর বিষয়টি জানাজানি হলে বাসায় মোবাইল ফোন রেখে গা-ঢাকা দেন কনিকা। প্রথমে তিনি বিমানবন্দর দিয়ে ভারতে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে খিলগাঁওয়ের সিপাহিবাগ এলাকায় বান্ধবী মিলির বাসায় আশ্রয় নেন তিনি।

নাটক সাজিয়ে মিলির মাকে বলেন, ঘর থেকে ৬৫ হাজার টাকা চুরি হওয়ায় তার দাদি বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। পরে যশোরের বেনাপোল দিয়ে বর্ডার ক্রস করতে চেয়েছিলেন কনিকা। এদিকে মিলির কাছ থেকে পাওয়া কনিকার নতুন মোবাইল নম্বর এবং সেই মোবাইল নম্বরে সৈকতের সর্বশেষ কথোপকথনের সূত্র ধরে বেনাপোলে কনিকার অবস্থান শনাক্ত করার পর তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

উদ্ধার করা লাগেজে বাবার উলঙ্গ লাশের সঙ্গে ব্যবহৃত কনডম পাওয়ার বিষয়ে কোনো কিছু ধারণা করতে পারছেন না বলে নিহতের মেয়ে মলি জানান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার এসআই মো. শরীফুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, মামলাটি পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বেশ কটি ইউনিট ছায়া তদন্ত করছে।

কারা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা জানা গেছে। পরকীয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে তদন্তে; তবে অর্থ সংক্রান্ত বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় এক নারী ও নিহতের ছেলে ছাড়া আর কেউ আটক আছে কিনা তা আমার জানা নেই।

তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন লাগেজ থেকে লাশের সঙ্গে একটি ব্যবহৃত কনডমও উদ্ধার করা হয়েছিল। সেটিতে আঠালো জাতীয় কিছু ছিল।

সেটি কী ছিল তা পরীক্ষার জন্য আদালতের মাধ্যমে কনডমটি সিআইডির আধুনিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব আসামিকে গ্রেপ্তার সম্ভব হবে বলে এসআই শরীফুজ্জামান জানান

Source; dainikamadershomoy.com

শেয়ার করুন: